মহামারি এল, চিড়িয়াখানা বন্ধ হলো, তারপর দেখা গেল প্রাণীদের নতুন রূপ!
করোনা মহামারি যেমন মানুষের জীবনযাপন, অভ্যাস ইত্যাদিকে প্রভাবিত করেছিল, তেমনি প্রভাবিত করেছিল চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কের পশুগুলোকেও। এ সময়টায় সেখানকার প্রাইমেটগুলোর (সর্বোচ্চ শ্রেণির স্তন্যপায়ী প্রাণী। বানর, গরিলা প্রভৃতি এ শ্রেণির অন্তর্গত) আচরণ কিংবা প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, তা একটি গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষকরা বলছেন, যেখানে পশুগুলো দর্শনার্থীদের ভিড়ের সঙ্গে অভ্যস্থ ছিল, সেখানে মহামারির সময় চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কে হঠাৎ দর্শনার্থী আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পশুগুলোর বিভিন্ন অভ্যাসে পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন, খাবার গ্রহণের পরিমাণ, বিশ্রামের সময়ের পরিমাণ ইত্যাদি।
গবেষণাটি সম্পন্নের জন্য গবেষকরা যুক্তরাজ্যের টুয়াইক্রস জু ও নোজলি সাফারি পার্কে দর্শনার্থীর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি এ দুই সময়ে বনোবো, শিম্পাঞ্জি, গোরিলা ও অলিভ বেবুনের আচরণ ও প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। এতে পশুগুলোর খাওয়া ও বিশ্রামসহ বিভিন্ন অভ্যাসে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও পশুভেদে পরিবর্তনেও ভিন্নতা দেখা যায়।
গবেষকরা জানান, দর্শনার্থীদের মিথস্ক্রিয়ার বিষয়টি চিড়িয়াখানার পশুদের ভালোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। যদিও এসব মিথস্ক্রিয়া ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক উভয়ই হতে পারে। তাই গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন যে যখন ভিড় ছিল না, অর্থাৎ মহামারি চলাকালে দর্শনার্থীদের অনুপস্থিতির ওই সময়টায় পশুগুলোর আচরণ কেমন ছিল।
নটিংহ্যাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির চিড়িয়াখানার পশু কল্যাণ বিষয়ক বিজ্ঞানী সামান্থা ওয়ার্ড বলেন, 'প্রাইমেটগুলো চিড়িয়াখানার সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে একটি এবং দর্শনার্থীদের সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়া বেশ জটিল।'
যখন আবারও চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়া হয় এবং দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন, তখন দেখা যায়, বনোবোর একাকি সময় কাটানোর পরিমাণ অনেক কমে গেছে এবং গোরিলাদের একাকি সময় কাটানোর পাশাপাশি বিশ্রাম নেওয়ার সময়ও কমে গেছে।
অপরদিকে শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়ার পর তারা বেশি পরিমাণে খাচ্ছিল এবং আরও বেশি করে বেড়া বা দেয়ালের কাছে আসছিল।
দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করায় সাফারি পার্কের অলিভ বেবুনদের যৌন ক্রিয়াকলাপ ও আধিপত্যপূর্ণ আচরণের প্রবণতা কমে যায়।
তবে প্রাণীগুলোর এসব আচরণ বা অভ্যাসের পরিবর্তন ইতিবাচক ছিল কি না, তা বলাটা বেশ কঠিন। গবেষকরা বলছেন, দর্শনার্থীদের ফিরে আসা শিম্পাঞ্জি ও অলিভ বেবুনদের উদ্দীপিত করেছিল। অন্যদিকে গরিলা ও বনোবোদের একাকি কম সময় কাটানোর বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখা যেতে পারে।
গরিলাদের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, দর্শনার্থীদের উপস্থিতি প্রাণীগুলোকে প্রভাবিত করেছিল। কারণ, এরা তখন কম সময় বিশ্রাম নিয়েছিল।
গরিলারা বেষ্টনি বা দেয়ালের যেসব অংশে বেশি সময় কাটাত, দর্শনার্থীরা ফিরে আসার পর প্রাণীগুলো সেসব জায়গা পরিবর্তন করেছিল।
গবেষকরা লক্ষ্য করেন, দর্শনার্থীর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার সঙ্গে অলিভ বেবুনের প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এ সংখ্যা অতিক্রম হলে, সাফারি পার্কের ভেতর চলাচলকারী গাড়িগুলো দেখার পরও প্রাণীগুলো আরও বেশি সক্রিয় ও উত্তেজিত হতো না।
গবেষকরা বলছেন, দর্শনার্থীরা বন্যপ্রাণীদের ওপর নানা প্রভাব ফেলতে পারেন। তারা প্রাণীদের সহানুভূতি ও নিরাপত্তার অনুভূতি তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারেন, আবার বিরক্তি বা এমনকি হুমকির অনুভূতি সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারেন। তাই চিড়িয়াখানা এবং পার্কগুলোর পরিকল্পনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।
গবেষণাটি বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল এনিমালস-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটির আগের একটি সংস্করণ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক