কম ভোগ্যব্যয়ে বড় ঘাটতি রাজস্ব আহরণে
- আট মাসের লক্ষ্যমাত্রা ১৯৬১৪৭ কোটি টাকা
- আট মাসে আদায় ১৫১৪৭২ কোটি টাকা
- ঘাটতি ৪৪৬৭৫ কোটি টাকা
- ভ্যাট খাতেই ঘাটতি ১৯০০৯ কোটি টাকা
- ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৪.০৫ শতাংশ
- গত পাঁচ বছরের গড় প্রবৃদ্ধি ১০.২০ শতাংশ
করোনার ধাক্কা সামলিয়ে দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক হলেও ভোগ্যব্যয় স্বাভাবিকতায় না ফেরায় রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ পিছিয়ে সরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আটমাসে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৪৪৬৭৫ কোটি টাকা কম এসেছে রাজস্ব আহরণ। মানুষের ভোগ্যব্যয় কম হওয়ায় পণ্য ও সেবা থেকে আহরিত ভ্যাট খাতেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে ঘাটতি ১৯০০৯ কোটি টাকা।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, রাজস্ব আহরণের সবচেয়ে বড় উৎস ভ্যাট খাত। পণ্য ও সেবা বিক্রির ওপর থেকে এ ভ্যাট সংগ্রহ করা হয়। অনলাইন ভ্যাট চালু করে ইএফডিতে ভ্যাট প্রদানে পুরস্কার প্রদানসহ নানা উদ্যোগও নিয়েছে এনবিআর। তবে ভোক্তাদের ভোগ ব্যয় কম হওয়ায় লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়নি।
তবে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সামগ্রিক রাজস্ব আহরণে ৪.০৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা। গত পাঁচ বছরের রাজস্ব আহরণের গড় প্রবৃদ্ধি ১০.২০ শতাংশ।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সাংবাদিকদের বলেন, করোনার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমদানি-রফতানি কমেছে। তবে অটোমেশনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে সব স্তরের কর্মকর্তারা।
তিনি বলেন, করোনার সময়ে একদিনের জন্যও দেশের কাস্টমস বন্ধ হয়নি। জরুরি অবস্থায় সেবা হয়েছে। শুল্ক ছাড় দিয়ে করোনার নিরাপত্তা ও প্রতিরোধ সামগ্রী বন্দর থেকে খালাস করেছে কাস্টমস কর্মকর্তারা।
এনবিআরের হিসাবমতে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ১৯৬১৪৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব এসেছে ১৫১৪৭২ কোটি টাকা। সামগ্রিক লক্ষ্যমাত্রা থেকে রাজস্ব আহরণের ঘাটতি ৪৪৬৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট খাতে ৭৭৩২৩ কোটি টাকার বিপরীতে এসেছে ৫৮৩১৪ কোটি টাকা।
যদিও অটোমেটশনকে টার্গেট করে ভ্যাট খাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। ইলেকট্রিক ফিসক্যাল ডিভাইসের মাধ্যমে ভ্যাট প্রদান করলে প্রতিমাসে ১০১ জনকে লটারির মাধ্যমে পুরস্কারও দিচ্ছে এনবিআর।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোগ ব্যয় কমেছে। চলতি বছর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সিগারেট ও গাড়িসহ বড় খাতে রাজস্ব কম এসেছে। মূলধনী যন্ত্রাংশ আমদানিও কমেছে। ফলে ভ্যাট খাতে লক্ষ্যপূরণ হয়নি।
করোনার আক্রমনের শুরুর দিকে নেতিবাচক প্রবণতা শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে সর্বশেষ ডিসেম্বরে ভ্যাট আহরণে ইতিবাচক ধারায় ফিরে এনবিআর। কয়েক মাস ধরে এ খাতে রাজস্ব আহরণ ধারাবাহিক বৃদ্ধির কারণে ভ্যাট খাতে লক্ষ্যপূরণ নিয়েও আশাবাদী এনবিআর।
ভ্যাট খাতে আদায়ে মাত্র শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে আটমাসে সবচেয়ে ভালো করেছে আমদানি-রফতানি পর্যায়ে পণ্য থেকে আহরিত কাস্টমস ডিউটি থেকে। এ খাতে ৭,৭২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে এনবিআর।
কাস্টমসের কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক মাসে আগের অর্ডারের প্রচুর পণ্য দেশে প্রবেশ করেছে। সিমেন্টের ক্লিংকার, স্টিল সামগ্রীসহ কয়েকটি পণ্য আমদানি বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
কাস্টমসের সঙ্গে প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে আয়কর খাতও। জুলাই-ফ্রেব্রুয়ারি সময়ে ৫.২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে ব্যক্তি ও কোম্পানি পর্যায় হতে আহরিত আয়কর থেকে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০২০-২১ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় ব্যক্তিগত রিটার্ন থেকে আয়কর পেয়েছে এনবিআর। তাছাড়া মোট আয় করের ৮৫ শতাংশ উৎসে আয়কর বাবদ আহরিত হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে না গিয়েই এ খাতে রাজস্ব পেয়েছে এনবিআর। বেতনভোগী ও ব্যবসায়ীদের আয়ের উৎস পর্যায়ে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে কেটে রাখা হয়।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনায় অর্থনীতির ভঙ্গুরতার মধ্যে আমদানি কমে যাওয়া ও মানুষের বিলাস দ্রব্য ব্যবহার কম হওয়ায় ভ্যাট আহরণ কমেছে। তবে একই সময়ে সরকারি প্রকল্পের মেশিনারি আমদানি ও আগের অর্ডারের পণ্য খালাস হওয়ায় কাস্টমসে কিছুটা সফলতা এসেছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'বছরের শুরু থেকে অনেক দরকারি পণ্যও আমদানি হয়নি। কয়েক মাস বৈশ্বিক বাণিজ্য অনেকটা অচল ছিল। ফলে গত কয়েক মাসে আমদানি কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে অর্থবছর শেষে রিটার্ন দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় রাজস্ব আহরণও বাড়ে। তবে এ প্রবৃদ্ধি স্থায়ী কি না তা এখনই পরিস্কার করে বলা যাবে না'।