করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় বাজেটে কর প্রত্যাহারের দাবি এফবিসিসিআইয়ের
চলমান করোনার সেকেন্ড ওয়েভের বাস্তবতার আলোকে ব্যবসাবান্ধব বাজেট চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন করে করারোপ না করে করপোরেট ট্যাক্সসহ বেশ কিছু ছাড় দিয়ে বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা ।
রোববার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বাজেট কনসালটেটিভ বৈঠকে এসব দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
অতীতের ধারাবাহিকতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এফবিসিসিআই যৌথভাবে ৪১ তম পরামর্শক কমিটির ঐ সভা আয়োজন করে। এতে ব্যবসায়ী নেতারা তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। করোনা ভাইরাস ও লকডাউন পরিস্থিতিতে এবার ভার্চুয়ালি এ সভার আয়োজন করা হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, "চলমান করোনার সেকেন্ড ওয়েভের বাস্তবতার আলোকে এবং গত বাজেটের ধারাবাহিকতায় রাজস্ব ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করতে হবে,"
ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আয়কর, ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ও শুল্ক বিষয়ে বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, অগ্রিম আয়কর (এআইটি), আগাম করসহ (অ্যাডভান্স ট্যাক্স বা এটি) সব ধরণের অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা দরকার।
অন্যদিকে ব্যবসায়ে লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে প্রতিটি ক্ষেত্রে চালানভিত্তিক লেনদেন প্রক্রিয়া চালু করার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, "এটি কার্যকর করা হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং তা জিডিপিতে করের অবদান বাড়াতে সহায়ক হবে,"
ব্যবসায়ীদের পণ্যের মূল্য ঘোষনায় (সেল্ফ ডিক্লারেশন) তিন বার পর্যন্ত সুযোগ দেওয়ার পরও কেউ মিথ্যা ঘোষনায় দিলে সেক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, এতে তৃণমূল পর্যায়ে করের আওতা বাড়বে। বর্তমানে লাভ লোকসান নির্বিশেষে মোট প্রাপ্তি তিন কোটি টাকার ওপর ০.৫ শতাংশ করের বিধান বহাল রয়েছে।
তিন কোটির স্থলে তা ৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই। এছাড়া ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর বা এ জাতীয় ব্যবসায়ীদের প্রকৃত মূল্য সংযোজনের ওপর ভিত্তি করে ভ্যাট আরোপ, কর্পোরেট কর ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা, রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে স্বয়ংক্রিয় ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসাসহ বেশকিছু প্রস্তাব দেওয়া হয় এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, "ব্যবসায়ীদের জন্য অগ্রিম আয়কর প্রদান কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমরা গত বাজেটেও অগ্রিম আয়কর কমানোর দাবি করেছিলাম। সরকার বিবেচনা করে কিছুটা কমিয়েছে,"
আগামী দুই থেকে তিন অর্থ বছরের মধ্যে অগ্রিম আয় কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবী করেন ব্যবসায়িদের এ শীর্ষ নেতা।
এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, "এইচ এস জনিত জটিলতায় রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক ধারা ব্যহত হচ্ছে। অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে নতুনভাবে এইচ এস কোড পুননির্ধারণ করতে হবে,"
আগামী বাজেটেই এ সমস্যার সমাধানে পরামর্শ দেন তিনি।
এফবিসিসিআই সাবেক সহ সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, "প্রতি বছরই এনবিআরের আদায় বাড়ছে। তবে এনবিআরের ওপর বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। এতে অর্থনীতিতে ভারসাম্য নষ্ট হয়।"
ব্যবসায়ীদের দাবি প্রেক্ষিতে আগামী অর্থ বছরের বাজেট করোনাকালিন সংকট মোকাবেলার উপযুক্ত বাজেট হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, "বাজেটে আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) দাবির প্রতিফলন থাকবে। নতুন করে কোন ভার কারো ওপর পড়বে না,"
পরামর্শক সভায় ব্যবসায়িদের উদ্দেশ্য অর্থমন্ত্রী বলেন, "আপনাদের দাবিগুলো যুক্তিযুক্ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাস্তব সম্মত। অর্থমন্ত্রণালয় এবং এনবিআরের বাজেট কমিটি এক সঙ্গে আপনাদের দাবীগুলো নিয়ে বৈঠক করে বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য বাছাই করবে, "
তিনি বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতেও এনবিআরকে আয় করতে হবে। এজন্য কৌশল নিতে হবে। আগামী অর্থ বছরে নতুন কর আরোপের কৌশল না নিতে এনবিআরকে অনুরোধ করবো।"
এনবিআরের সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে জানান অর্থমন্ত্রী।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, "এনবিআর ১ মার্চ থেকে আগামী বাজেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে। বর্তমান এনবিআরের চেষ্টা কর বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা। করের আওতা বাড়লে করের পরিমাণ কমবে। আমরা সে চেষ্টা করছি।"