করোনায় অতি-দরিদ্রদের ব্যাংক আমানত অর্ধেক কমে গেছে
১০ টাকায় খোলা ব্যাংক হিসাবে অতি-দরিদ্ররা যে আমানত রাখে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শেষে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অবশ্য অ্যাকাউন্টের সংখ্যা খানিকটা বেড়েছে।
গত মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের 'রিপোর্ট অন নো-ফ্রিল অ্যাকাউন্টস' প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে এসব হিসাবে আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৯১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৬৫ কোটি টাকা। আমানত কমেছে ৪৮ শতাংশ বা ১৭৪ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় আয় কমে যাওয়ায় অনেকে সঞ্চয় তুলে ফেলেছেন। নতুন আমানত রাখাও অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অংশ হিসেবে অতি-দরিদ্র ছাড়াও কৃষক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগী, মুক্তিযোদ্ধা, পোশাক শ্রমিক, পথশিশু-সহ সমাজের পিছিয়ে পড়াদের জন্য নামমাত্র মূল্যে ব্যাংক হিসাব খোলার সুবিধা আছে।
১০ ছাড়া ৫০ ও ১০০ টাকাতেও এসব হিসাব খোলা যায়, যা 'নো-ফ্রিল অ্যাকাউন্ট' নামে পরিচিত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এরকম হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার ৭১০টিতে। আর আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২,১৮০ কোটি টাকা। একইসময় হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৮.৪৮ শতাংশ।
সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়েনি আমানতের পরিমাণ। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে আমানত আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে মাত্র ০.৩৩ শতাংশ। গেল বছর সেপ্টেম্বের শেষে আমানতের স্থিতি ছিল ২,১৭৩ কোটি টাকা।
এসব হিসাবের ৮৩ শতাংশ এবং আমানতের ৭৯ শতাংশই রক্ষিত আছে পাঁচটি সরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংকে।
নো-ফ্রিল একাউন্টের ৪৪ ভাগই কৃষকদের। অন্যদিকে এসব একাউন্টে সবচেয়ে বেশি আমানত আছে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের, যা মোট আমানতের প্রায় ২৮ শতাংশ।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এসব অ্যাকাউন্টে কৃষকদের জমা আছে ৪০৪ কোটি টাকা, অতি-দরিদ্রদের ১৯১ কোটি টাকা, মুক্তিযোদ্ধাদের ৫১৫ কোটি টাকা, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধীনে উপকারভোগীদের আছে ৬০৫ কোটি টাকা, পোশাক শ্রমিকদের ১৭৮ কোটি টাকা এবং অন্যান্যদের ২৮৬ কোটি টাকা।
এ সময়ে ১ লাখ ২৫ হাজার নন-ফ্রিল একাউন্টের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ৪৯৭ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে কৃষকদের হিসাবে, ৪১২ কোটি টাকা।
গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে ২০১৪ সালে ২ হাজার কোটি টাকার রিফাইন্যান্স কর্মসূচি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই কর্মসূচির আওতায় নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়ে থাকে।
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে প্রায় ৭০,৫০০ একাউন্টের বিপরীতে ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম।
শিক্ষার্থীদের নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্টে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে হিসাব সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৫০ হাজারে। এসময়ে আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২১ কোটি টাকা।
শিক্ষার্থীদের হিসাবের মধ্যে ৬০ শতাংশ শহরে, ৪০ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায়। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের হিসাব সংখ্যা বেশি। স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের প্রায় ৭০ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে।
সেপ্টেম্বর শেষে পথশিশুদের ১০ টাকার হিসাব খোলা কিছুটা বেড়েছে। ১৯টি ব্যাংকে তাদের ১০ হাজার ৬৫২টি হিসাবের বিপরীতে জমা আছে ৩৯ লাখ টাকা।
একই সময়ে প্রতিবন্ধীদের হিসাবের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে এবং তাদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৫১ কোটি টাকা।