করোনা মহামারী: মানুষের পাশে কতটা দাড়াচ্ছে মোবাইল অপারেটরগুলো?
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান, কাতার, বাহারাইন, কুয়েত, সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের মোবাইল ফোন গ্রাহকরা বিনামূল্যে ডেটা ব্যবহার ও লোকাল কল করার সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক কল রেটও কমানো হয়েছে।
রোববার মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকজন বাংলাদেশি প্রবাসী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিদিন কারণে-অকারণে বহুবার কল বা ইন্টারনেটে ডেটা অন করতে হয় নাগরিকদের। আতঙ্কের এ সময়ে কোনো বাড়তি আয় রোজগার না থাকলেও অতিরিক্ত যোগাযোগে ব্যায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কতদিন এমন চলবে তা জানে না কেউ।
ইব্রাহীম এবং শাহিন রুবেল নামে দুজন প্রবাসী ওমান থেকে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ওমানের সরকারি-বেসরকারি সকল অপারেটর তার গ্রাহকদের জন্য আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত সকল লোকাল কল ফ্রি এবং আন্তর্জাতিক কলরেট কমিয়ে দিয়েছে। মাসে ২০ জিবি পর্যন্ত ডেটা ব্যবহার মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ভিন্ন পথে হাটছে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলো। তারা ডেটা বা কলরেট কোনোটিই কমায়নি। গ্রামীনফোন শুধুমাত্র তাদের সিগন্যাল বারে 'স্টে হোম' লিখে রেখেই তাদের দায় শেষ করেছে। এ ছাড়া বাংলালিংক তাদের 'আমার টিউন' সার্ভিসে করোনা সম্পর্কিত কয়েক সেকেন্ডের সচেতনতামূলক তথ্য দিচ্ছে। এ ছাড়া উভয় কোম্পানি করোনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেবার নাম্বারগুলোতে (বিটিআরসি কর্তৃক টোল ফ্রি) বিনামূল্যে কল করার সুযোগ দিয়েছে।
কাউছার আলম জুয়েল কুয়েত থেকে জানিয়েছেন, কুয়েতের সকল মোবাইল কোম্পানি লোকাল কলরেট এবং ইন্টারনেট ফ্রি করেছে। লেবানন থেকে আবু হানিফ জানিয়েছেন, লেবাননের বিভিন্ন কোম্পানি এক মাসের ফ্রি কল এবং প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য বাংলাদেশি এক হাজার টাকার সমপরিমাণ ডেটা প্রতিমাসে বিনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সৌদি আরব থেকে নূরে আলম জিকু এবং কামরুল হাসান জানিয়েছেন, সৌদির লেবারা এবং অন্যান্য কোম্পানি লোকাল কল এবং ইন্টারনেট মওকুফ করেছে। মো. ওমর ফারুক সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জানিয়েছে, আরব আমিরাতে ইত্তেসালাত অপারেটর করোনা সময় পর্যন্ত ইন্টারনেট ফি মওকুফ করে দিয়েছে।
ওমান থেকে ইব্রাহীম খলিল বলেন, আমি দরিদ্র ঘরের সন্তান। খুব কষ্ট করে ওমানে আসার পরপর এ মহামারিতে পড়ে বাংলাদেশ। বৃদ্ধ মা বাবার খোঁজ খবর নিতে প্রতিদিনই বাংলাদেশে ফোন করি। ওমান সরকার যদি এ সুবিধা না দিত তবে আরো বেশি টেনশনে থাকতাম।
সৌদি প্রবাসী কামরুল হাসান জানান, বাড়ি থেকে মা জানিয়েছে তার ফোনে টাকা নেই। তাই পরিচিতজনদের কাছে ফোন করতে পারছেন না।
পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগের বড় মাধ্যম এখন মোবাইল ফোন। আর করোনা আতঙ্কের কারণে গত কয়েক দিনে বাড়ছে মোবাইল ফোনে কথা বলার হার। সঙ্গে বেড়েছে ডেটা ব্যবহারের হার। সে কারণে অনেকেই ফোন রির্চাজ করতে গিয়েই এখন হিমশিম খাচ্ছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, বাংলাদেশের কোনো কোম্পানিই এই দূর্যোগে কলরেট বা ইন্টারনেটের ডেটা রেট মওকুফ তো দূরের কথা, কোনটার মূল্যও হ্রাস করেনি।
ওয়েবসাইট খুঁজে জানা যায়, গ্রামীন ফোনের বর্তমান কোনো প্যাকেজ না নিলে গ্রামীণ কলরেট এখনো এক টাকার ওপরে ধার্য করা হয়। সঙ্গে রয়েছে ভ্যাট, এসডি ও সারচার্জ। আর এক মাস মেয়াদের এক জিবি থ্রিজি ডেটা ১৮৯ টাকা। ২৮ দিন মেয়াদের রবির এক জিবি ১২৮ টাকা। বাংলালিংক ৩০ দিনের এক জিবি ১১৯ টাকা। এয়ারটেল ৩০ দিনের দুই জিবি ২২৯ টাকা। টেলিটকের এক জিবি ৪৬ টাকা।
কলরেট এবং ডাটার মূল্য হ্রাস করা হয়নি বলে জানিয়েছে গ্রামীনফোন। নিকট ভবিষ্যতে এটি কমানো হবে কিনা সেটিও নিশ্চিত করে বলেনি দেশের বৃহত্তম এই মোবাইল অপারেটরটি।
গ্রামীনফোনের এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হাসান বলেন, "আমাদের বর্তমান ডাটা প্যাকেজ এবং ভয়েস প্যাকেজগুলো গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করছে। পরবর্তীতে কোনো অফার দেওয়ার আগে আমরা গ্রাহকদের এই ব্যবহারের বিষয়টিকে মূল্যায়ন করবো।"
বাংলালিংকের সিনিয়র ম্যানেজার (কমিউনিকেশন) অঙ্কিত সুরেকা বলেন, "বাংলালিংক মাসিক ডাটা প্যাকেজের দাম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। এছাড়া আমরা আমাদের ডাবল ডাটা বোনাস অফারটিও চলমান রেখেছি।"
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন (বিটিআরসি)র তথ্য মতে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট মোবাইল ফোন গ্রাহক ১৬৬.১১৪ মিলিয়ন এবং ইন্টারনেট গ্রাহক ৯৯.৯৮৪ মিলিয়ন। যার মধ্যে শুধু মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ৯৪.২৩৬ মিলিয়ন।