গ্রামীণ শিল্পের নাভিশ্বাস
ঢাকার নিউমার্কেট বা বঙ্গবাজার বন্ধ থাকাকালীন শুধু দোকান মালিকরাই যে ক্ষতির মুখে পড়েেছেন তা নয়। রাজধানীর উপকণ্ঠের মুন্সীগঞ্জের গ্রামের ফাতেমা আক্তারের মতো উদ্যোক্তাদের জন্যও ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন এই পরিস্থিতি। আয় উপার্জন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে তাদের।
উদ্যোক্তা ফাতেমা আক্তার বলেন, "আগে ঢাকার নিউমার্কেট-বঙ্গবাজারে নকশি ও শাড়ির কারুকাজের কাজ পেতাম। এমন পরিস্থিতির কারনে এসব অর্ডার বন্ধ রয়েছে। একটি শাড়িতে কাজ করলে ৮০০-১২০০ টাকা পেতাম। এক একটি নকশি কাঁথার কাজে আকারভেদে ৪০০ থেকে আড়াই হাজার পেতাম। ২০২০ সালে ৫ লাখ টাকা বিক্রি করে লাভ হয়েছে অনেক। ২০২১ সালে ২ লাখ টাকা বিক্রি করে ২১ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। অনেক নকশি কাঁথা অবিক্রিত রয়ে গেছে,"
লকডাউনের ফলে বন্ধ রয়েছে মার্কেট, শপিং মল, সাপ্লাই চেন স্থবির হয়ে পড়ায় উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তারা, কাজ একেবারেই নেই বলা চলে। গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্পের নানা পণ্যের চাহিদা কমে যেতে থাকে, কয়েক দফা লকডাউনের কারণে ওই সময়েই তারা যাই তৈরি করছেন, তাও বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ফাতেমা আক্তার বলেন, তার সঙ্গে ৬৫ জন কাজ করেন, তাদের প্রত্যেকের অত্যন্ত দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
"মেলা নেই তার জন্য কাঁথা বিক্রি হচ্ছে না। সহজ শর্তে যদি কিছু ঋণ পেতাম তাহলে বেঁচে যেতাম। আমাদের কেউ ঋণও দেয় না," বলছিলেন তিনি।
রাজধানীর উপকন্ঠ মুন্সীগঞ্জে হস্তশিল্পের সাথে জড়িত এক ডজনের বেশি নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা হলে একইভাবে নিজেদের দুরবস্থার কথা জানান তারা।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার চরকিশোরগঞ্জ মোল্লারচর , খালইস্ট এলাকা এবং জেলার সিরাজদীখান উপজেলার কোলা গ্রামের কয়েকজন নারী উদ্যোক্তার কেউ আছেন লোকসানে, কেউ ছেড়ে দিয়েছেন পেশা, আবার অনেকে কোনোমতে পেশার সাথে জড়িতে থাকলেও পড়েছেন ভয়াবহ আর্থিক সংকটে। সকলের দাবি সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণ পেলে হস্তশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি তাদেরও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হতো।
মহিলা কল্যাণ সমিতি নামের এক উদ্যোক্তাদের সংগঠনের সভানেত্রী সাফিয়া খাতুন জানান, করোনার কারণে সমিতির কাজ উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে।
তিনি জানান, তার সমিতির আওতায় ৪০ জন কাজ করছেন। সমিতির উল্লেখযোগ্য দিক হলো নকশি কাঁথার শেলাই প্রশিক্ষণ। এখানে হয় ব্লক-বাটিক, পুঁতি, বাঁশ-বেত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করা হয়।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার চর কিশোরগঞ্জ মোল্লার চর এলাকার পাখি বেগম একতা মহিলা উন্নয়ন সমিতিতে বেশ ক'জন বিধবা ও প্রতিবন্ধীসহ ৬০ জন নারী কাজ করেন।
"সবাই সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টায় কাজ শুরু করি, তবে বর্তমানে সকলেই অভাবের মধ্যে রয়েছে। তবে করোনার কারনে এখন কোন চাহিদা না থাকায় বিপাকে পড়েছি," বলেন সমিতির পাখি বেগম।
মুন্সীগঞ্জ জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আলেয়া ফেরদৌসী বলেন, ইতোমধ্যে অনেক নারীকে কার্যালয় থেকে ঋণ দেওয়া হয়েছে । ঋণের শর্ত সহজ, মাত্র ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে ঋণ দেওয়া হয়। এরপরও যদি সমস্যা থাকে তাহলে তাদের সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া কোভিড পরিস্থিতি ভালো হলে একটি পার্লার ও ডিসপ্লে সেন্টার খোলা হবে, সেখানে তৈরিকৃত পন্য পর্দশন ও বিক্রি করতে পারবেন বিক্রেতারা।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসূল বলেন, বিষয়টি সর্ম্পকে খোঁজ নেওয়া হবে । উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে এসব নারীদের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
পুঁজি শেষের পথে, ঋণের ওপর ব্যবসা চলছে
করোনার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে বগুড়ার কুটির শিল্প। অন্য পেশার যাওয়ারও সুযোগ নেই কারিগরদের। এ কারণে বাধ্য হয়ে পুঁজি ভেঙে সংসার চালাতে হচ্ছে তাদের।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুর রহমান বলেন, "বগুড়ায় কতোগুলো কুটির শিল্প আছে তার কোনো পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। করোনা আর লকডাউনের কারণে এই শিল্প ব্যাপক সংকটের মুখে পড়েছে। কেউ কেউ কুটির শিল্প গুটিয়ে নিতেও বাধ্য হয়েছেন।"
জয়নাল আবেদীন নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক টুকরি ব্যবসায়ী জানান, করোনায় ব্যবসার মন্দাভাবের কারণে সংসার চালাচ্ছেন ধারদেনা করে।
"এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা দেনা করেছি আমি," বলেন তিনি।
সরাইল উপজেলার অরুয়াইল গ্রামের রতন দাস বংশ পরম্পরায় মাছ ধরার জাল বুনে বিক্রি করেন। স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে জাল বুনেন তিনি। এ ব্যবসা করে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হতো তার। কিন্তু করোনার কারণে এখন অসহায় অবস্থায় আছে রতনের পরিবার।
রতন দাস বলেন, "এখন মাসে ১০ হাজার টাকাও রোজগার করতে পারছিনা। জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন অসহায় অবস্থায় আছি। চক্ষু লজ্জায় কারো কাছে হাতও পাততে পারছিনা।"
ফরিদপুর জেলা জুড়ে প্রায় ৬ হাজার (অনলাইন ভিত্তিক সহ) ক্ষুদ্র কুটির শিল্প এন্টারপ্রাইজ রয়েছে। এদের বেশির ভাগই এখন বন্ধ রয়েছে। আর যেগুলো টিকে আছে সেগুলো কোনোমতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। করোনার লকডাউন যদি এভাবে আরো বেশিদিন স্থায়ী থাকে তাহলে আরও খারাপ অবস্থায় পড়তে হবে তাদের এমন আশঙ্কার কথাই জানা গেছে তাদের সঙ্গে কথা বলে।
আয় বিপর্যয়, ছাঁটাই- নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র এখন
বগুড়ার শহরের জলেশ্বরীতলার উদয়ীমান কুটির শিল্প 'জাহান্স' এর মালিক নুসরাত জাহান। তার আওতায় ১৯ জন নারী-পুরুষ কাজ করেন। বাসায় তৈরি করেন পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টপস, ফ্রকসহ আরও অনেক পোশাক।
নুসরাত জাহান বলেন, "আগের তুলনায় এখন ১০ শতাংশ পণ্যও তৈরি করা হয় না। এর মধ্যেই কারিগরদের ছাঁটাই করতে হচ্ছে।"
কয়েক বছর ধরে বগুড়া শহরের ধরমপুর পূর্বপাড়ায় অ্যান্টিকের গহনা তৈরির কাজ করেন খুশি বেগম ও তার স্বামী শহিদুল ইসলাম। একইসঙ্গে তাদের বাড়িতে গহনা তৈরির একটি ছোট কারখানাও গড়ে তুলেছিলেন তারা। আগে স্বামী-স্ত্রী, তিন সন্তানের খরচ চলত গহনা তৈরি করেই।
তারা জানান, "লকডাউন থাকলে কাঁচামালগুলো আমাদের এখানে আসতে দেরি হয়। আর বেশি সংকট তৈরি হচ্ছে গহনা তৈরি করা বিক্রি করার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।"
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামের ফারহানা আক্তার নিজে টুপি বানান। পাশাপাশি গ্রামের স্কুল, কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ও বেকার কিশোর কিশোরীদের দিয়েও টুপি বানাচ্ছেন। প্রতিটি টুপি নিজে বানালে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা পায় ফারহানা। একটি টুপি তৈরিতে ১০-১২ দিন লেগে যায়। মাসে প্রতিজন নারী ২-৩টি টুপি তৈরি করতে পারেন। ফারহানাদের বানানো টুপি দেশের মধ্যে বিভিন্ন জনের হাত বদল হয়ে যায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
কিন্ত করোনার কারণে গত ২ বছর যাবত এ টুপির কাজ কম দিচ্ছে মালিকরা। ফলে করোনার সময় তাদের আয় রোজগার অনেক কমে গেছে। ফারহানা জানান, প্রচলিত কারখানার শ্রমিক না বিধায় তাদের খবর কেউ রাখে না।
একই গ্রামের বিধবা নারী আলেয়া বেগম শীতল পাটি বানিয়ে মাসে ৭-৮ হাজার রোজগার করতেন। শীতল পাটির পাশাপাশি মুর্তা গাছের তৈরি নামাজের বিছানা, হাতপাখা তৈরি করতেন তিনি। কিন্ত করোনার ধাক্কা সেখানেও লেগেছে। আয়েশা জানান, আগের তুলনায় চাহিদা কিছুটা কমেছে, দাম কমে গেছে অনেক।
সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার মুন্নী নকশী কাথাঁ সেলাই করেন। তিনি ভালো ফুল আকঁতে পারেন। শিশুদের জন্য তার তৈরি প্রতিটি কাঁথা বিক্রি করতেন, ৫০০-১ হাজার টাকায়। আর বড়দের কাঁথা ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে তার কাঁথার ক্রেতা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে বলে জানালেন তিনি।
কমিয়ে আনতে হচ্ছে খাবারের খরচও
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের দারমা গ্রামের হাদিস মিয়া ও তার স্ত্রী রিমা আক্তার মিলে বাঁশের টুকরি বানিয়ে বিক্রি করেন বেপারীদের কাছে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর আগে স্বামী-স্ত্রীর এ ব্যবসা থেকে মাসে ২৫ হাজার টাকার মতো আয় হতো। এ টাকা দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলত। আবার কিছু টাকা সঞ্চয়ও করা যেত। কিন্তু মহামারির কারণে ব্যবসায় মন্দা দেখা যাওয়ায় এখন সংসার চালানো ও নিজেদের খাবারের খরচ যোগাড় করাই দায় হয়ে পড়েছে হাদিস মিয়ার।
হাদিস মিয়া বলেন, "এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সেই টাকাও শোধ করতে পারছি না। প্রতি মাসে সুদের পরিমাণ বাড়ছে। কীভাবে শোধ করব তাও জানিনা।"
"আগে প্রতি সপ্তাহে মাছ-মাংস খেতাম। অথচ এখন শাক-সবজি দিয়ে খেতেই কষ্ট হচ্ছে। মাসে দু-একবার ছোট মাছ এনে খাই," এভাবেই নিজের দুর্দশার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে হাদিসের মতো কুটির শিল্পে জড়িত তার গ্রামের বাকি পরিবারগুলোরই একই অবস্থা।
সফট লোন আর প্রণোদনা চান উদ্যোক্তারা
ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার রাজকন্যা বুটিক শপের মালিক আসমা সুলতানা বিথী জানান, তার বুটিক শপিং শপে কাজ করে ৪ জন। আর বাইরে থেকে কাজ করে আরও ৫০ থেকে ৬০ জন নারী। করোনার কারনে শপিং মল বন্ধ থাকায় মহা বিপদে পড়েছেন তিনি।
তিনি ঋণের জন্য চেষ্টা করছেন না বলেও জানান। তবে সরকারি কোনো প্রণোদোনা যদি দেওয়া হপ্য তাহলে ভালো হতো বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে একই শহরের উত্তর কমলাপুর এলাকার সাথি মাহমুদ ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছেন, ঋণ পেলে আবার ঘুরে দাড়াঁতে পারবেন বলে জানান তিনি।
গোয়ালচামট এলাকার নাহিদ নাসরিন জানান, নিজস্ব ডিজাইন করে সব ধরনের পোশাক তৈরি করা হয় তার প্রতিষ্ঠান থেকে। করোনার প্রভাবে কোন বেচা বিক্রি না থাকায় ভীষন সমস্যায় পড়েছেন তিনি। শোরুম খুলতে পারছেন না।
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার এস. এম কুদ্দস মোল্লা জানান, তার একটি নার্সারি, ফল বাগান ও বার্মি কমপোস্ট সার তৈরির কারখানা কাজে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন থেকে ৫ লাখ টাকার ঋণ নেন তিনি। করোনার কারণে বেচা বিক্রি তেমন না থাকায় ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ফরিদপুরের ডিজিএম মোঃ গোলাম হাফিজ বলেন, ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত মোট ৩৫ জন শিল্পোদ্যোক্তার মাঝে ২ কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণের চেক বিতরণ করা হয়। এছাড়া অতি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের মাঝে বিসিক নিজস্ব তহবিল এর আওতায় ৪০ লক্ষ টাকার ঋণ সহায়তা করেছি।
কুটির শিল্পের জন্য বরাদ্দ প্রণোদনা সহায়তা
মহামারির আঘাতে বিপর্যস্ত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে সরকার অনুমোদিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ।
অর্থ মন্ত্রণালয় বিসিককে ১০০০ কোটি টাকা বিতরণের অনুমতি দিয়েছে। তবে ২০২১ অর্থবছরের ৩০ জুনের মধ্যে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীর ৪৯৯ জন নারী ব্যবসায়ীসহ ১,৪১৬ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ৪ শতাংশ সুদহারে ৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রাজশাহী থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪০৩ জন উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছেন, তাদেরকে মোট ১২.৯০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়।
এছাড়াও বিসিক নিজস্ব তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৭০-৮০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তহবিল পাওয়ার পর চলতি অর্থবছরে আরও ৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করবে বিসিক।
বিসিকের চেয়ারম্যান মোস্তাক হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কোভিড -১৯ এর কারণে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাত গভীর সংকটে পড়েছে। তারা টিকে থাকার জন্যই লড়াই করছে। মহামারি সৃষ্ট ক্ষতি পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা তাদের মধ্যে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করছি,"
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনেকেই মূলধন সংকটে পড়েছেন, তারা যাতে তাদের পণ্যগুলি বিক্রি করতে পারে সেকারণ অনলাইনে মেলার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
"আমরা প্রতিটি জেলায় একটি ১৫ দিনের অনলাইন মেলার আয়োজন করছি, খুব ভাল সাড়াও পাচ্ছি। বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় অনলাইনে প্রায় ৬৩টি মেলা চলছে। এ ধরনের মেলা পর্যায়ক্রমে আরও বাড়ানো হবে," বলেন তিনি।
দেশের মোট শিল্প খাতের ৮৬ শতাংশই কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প। এরমধ্যে মাত্র ২৫ হাজারের সরকারি নিবন্ধন রয়েছে।
ক্ষুদ্র, কুটির এবং মাঝারি শিল্পের জন্য জিআইএস ভিত্তিক অনলাইন ডেটাবেস অনুসারে, সারা দেশে কুটির শিল্পের সংখ্যা ১২২,৩১৫। এ জাতীয় ছোট খাতগুলোতে কাজ করছেন ৮৫১,৪৪০ জন মানুষ, এরমধ্যে নারী আছেন ৪.৩৮ লাখ জন।
কুটির শিল্প এমন এক ধরনের শিল্প উদ্যোগ যা প্রধানত কোনো পরিবারের সদস্যদের দ্বারাই পরিচালিত হয়, যার বিনিয়োগ হয় ১০ লাখ টাকার মতো, শ্রমিক থাকেন সর্বোচ্চ ১৫ জন।
ঢাকা থেকে রফিকুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি মঈনউদ্দিন সুমন, বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি সানা উল্লাহ সানু, ফরিদপুর প্রতিনিধি সঞ্জিব দাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি আজিজুল সঞ্চয় প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন।