চাঙা দেশের চায়ের বাজার
চলতি বছরের করোনার প্রভাবে লকডাউনে বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশে চা বিক্রির প্রধান স্থান হোটেল মোটেলসহ চা স্টলগুলো। এতে বাগানে বাগানে গুদামঘরগুলোতে জমতে থাকে চায়ের স্তূপ। চা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে গুদামঘরগুলো।
তবে এই আশঙ্কা দূর হয়ে গেছে পুরোই। চা বিক্রি পুরোদমে চলছে। বরং এখন চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমেদ জানান, বাংলাদেশে চায়ের যে বাজার তার ৮০ শতাংশ হলো চায়ের টং দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাস স্টেশন ও বাজার। দেশের চায়ের প্রধান গ্রাহক এই স্থানগুলো। করোনাভাইরাসের কারণে এ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় চা বিক্রি কমে যায় আশঙ্কাজনকভাবে। তবে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর সব পুরনো ধারায় ফিরে এসেছে। বর্তমানে দোকানপাট সব চালু থাকায় চা বিক্রি বেড়েছে।
চা বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, গত বছর রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনের পর এ বছর তা কমেছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৩৮ হাজার কেজি চা। গত বছর প্রথম ১০ মাসে উৎপাদন ছিল ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৪৬ হাজার কেজি।
চলতি বছর আবহাওয়ার জন্য উৎপাদন কিছুটা কমলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে জানিয়েছে চা বোর্ড। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার কেজি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চা উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলেও করোনার কারণে প্রথম কয়েক মাস বিক্রি না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চা গুদামঘরে পড়ে থাকে, যার কারণে এই শিল্পে হতাশা তৈরি হয়েছিল। এখন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে, তবে এখনো গত বছরের তুলনায় বিক্রি কম।
শ্রীমঙ্গল পদ্মা টি সাপ্লাই স্টোরের পরিচালক কাজল হাজরা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর চায়ের বিক্রি কমে যাবে বলে যে শংকা ছিল তা লকডাউন তোলে নেওয়ার পর পরেই স্বাভাবিক হয়েছে। বরং এই বছর চা উৎপাদন কম হওয়াতে গত বছরের তুলনায় দাম বেড়েছে। চাহিদা থাকায় দোকানে বা গুদামের মজুদ চা নষ্ট হয়নি। এই মৌসুমে চায়ের দাম কমার সম্ভবনা নেই। আগামী মৌসুমে উৎপাদন বাড়লে দাম কমবে।
ফাইম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম জানান, আগস্ট থেকে চায়ের বাজার ভালো। এর আগে খুব খারাপ ছিল। বর্তমানে বাজারের অবস্থা সন্তোষজনক।
নাহার চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার পিযুষ কান্তি জানান, 'আমার ওয়্যার হাউসে প্রায় ৩০ হাজার কেজি চা জমে ছিল এপ্রিলের দিকে। এগুলো ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারছিলাম না। এখন সে অবস্থা কাটিয়ে উঠেছি।'
বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট ভ্যালির সভাপতি জি এম শিবলি জানান, করোনার কারণে চা বিক্রি তিন গুণ কমে গিয়েছিল।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের বিপন কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, গত মৌসুমে (এপ্রিল ২০১৯ থেকে মার্চ ২০২০) চট্টগ্রাম এবং শ্রীমঙ্গলে ৪৫টি নিলামে চা বিক্রি হয়েছে ৯০.৪৪ মিলিয়ন কেজি, যার গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৭৬.০৮ টাকা। আর চলতি মৌসুমে (জুলাই পর্যন্ত) চট্টগ্রামে ছয়টি এবং শ্রীমঙ্গলে তিনটি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্রি হয়েছে ৬.৬৬ মিলিয়ন কেজি। গড় দাম ছিল ১৫৫ টাকা কেজি। তবে আগস্ট থেকে নিলাম কার্যক্রমে গতি এসেছে, অংশগ্রহণ বেড়েছে ক্রেতাদের। চাও বিক্রি হচ্ছে বেশ।
হামিদিয়া চা বাগানের ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'গত বছর আমরা এক লাখ ৮৫ হাজার কেজি চা উৎপাদন করি। চলতি বছর চায়ের উৎপাদন কিছুটা কম থাকলেও মে মাসের মধ্যে আমার ২৫ হাজার কেজি চা ওয়্যার হাউসে জমা হয়। এর কারণ ছিল গ্রাহকের অভাব। এখন বাজারের অবস্থা পরিবর্তন হওয়াতে চা বিক্রি হচ্ছে নিয়মিত । চা নষ্ট হবার আশঙ্কা কমে গেছে।'
টি প্লান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিপিটিএবি) সদস্য সচিব জহর তরফদার বলেন, এ বছর নিলাম কেন্দ্রে করোনার শুরুতে গ্রাহকের উপস্থিতি খুব কম ছিল, কিন্তু লকডাউন তুলে নেওয়ার পর আস্তে আস্তে গ্রাহকের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে নিলামে আগের থেকে অনেক বেশি চা বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বেড়েছে বলে অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যাপকভাবে চা বিক্রি হচ্ছে।