ঝুট কাপড়ে জেগেছে পাবনার হোসিয়ারি শিল্প
- পাবনা সদর ও আশপাশের এলাকায় প্রায় চার হাজার কারখানা
- পোশাক রপ্তানি হচ্ছে ভারত, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে
- বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি: হোসিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারার্স গ্রুপ
পোশাক কারখানার পরিত্যক্ত ঝুট কাপড়ের বদৌলতে নতুন প্রাণ পেয়েছে নব্বইয়ের দশকে সুদিন হারানো পাবনার হোসিয়ারি শিল্প।
এ কাপড়ের ওপর ভিত্তি করে পাবনা সদর ও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে হোসিয়ারি পণ্য তৈরির প্রায় চার হাজার কারখানা।
হোসিয়ারি মালামাল তৈরির এসব কারখানায় প্রায় ৫০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাবনা হোসিয়ারি ম্যানুফাকচারার্স গ্রুপের সভাপতি বারিক হোসেন জনি।
তিনি আরও জানান, এসব কারখানায় তৈরি প্রায় ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের স্যান্ডো গেঞ্জি, গোলগলা গেঞ্জি, টি-শার্ট, নারীদের ট্রাউজারের মতো পণ্য ভারত, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
হোসিয়ারি কারখানায় কাজ করা রাবেয়া খাতুন নামের এক নারী বলেন, "৫ বছর ঢাকার এক গার্মেন্টসে কাজ করতাম। বাড়ি থেকে দূরে পরিবার ছেড়ে একা একা থাকতে হতো। যা আয় করতাম সে টাকা দিয়ে নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ চালানোই কঠিন ছিল।
"৫ বছর কাজ করে কোনো সঞ্চয় করতে পারিনি। এখন আমি নিজের বাড়িতে থেকে স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বসবাস করছি। প্রতি মাসে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করছি।"
হোসিয়ারি ব্যবসায়ী রাশেদুজ্জামান রাসেল বলেন, "৪ লক্ষ টাকা পুঁজি ও পাঁচজন কারিগর নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এখন আমার কারখানায় নারী-পুরুষসহ কাজ করে ৩৫ জন। ঢাকা, গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে ঝুট কাপড় কিনে গেঞ্জিসহ নানা ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়।
"চাহিদা থাকায় কাপড় এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।"
হোসিয়ারি ব্যবসায়ী মো. রতন বলেন, পাবনায় হোরিয়ারি কারখানায় উৎপাদিত পোশাকের চাহিদা থাকায় বাড়ছে কারখানার সংখ্যা। অনেক বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ শিল্পে পুঁজি সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে একদিকে যেমন তৈরি হবে কর্মসংস্থান, অন্যদিকে বাড়বে ব্যবসার প্রসার।
পাবনা হোসিয়ারি ম্যানুফাকচারার্স গ্রুপের সভাপতি বারিক হোসেন জনি বলেন, কাঁচামাল ও শ্রমিকের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল পাবনার ঐতিহ্যবাহী হোসিয়ারি শিল্প। ঝুট কাপড় দিয়ে এই ব্যবসা আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বর্তমানে পাবনায় তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন হোসিয়ারি কারখানা। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের।
তিনি বলেন, ভারতে পাচার হওয়ায় সংকট তৈরি হয় এই ঝুট কাপড়ের। ঝুট কাপড় ভারতে পাচার রোধ এবং রপ্তানি নীতিমালা সংশোধন করলে অনেক দেশে এখানকার তৈরি পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারি সহায়তা জরুরি।
পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি আলী মর্তুজা বিশ্বাস বলেন, পাবনার হোসিয়ারি শিল্প প্রসারে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। এসব পণ্য রপ্তানিতে পাবনা চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।