ডিজিটাল ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত হবে এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পণ্য বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে ডিজিটাল ডিসপ্লে প্লাটফর্ম নিয়ে আসছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমইএফ)।
এ প্লাটফর্মে সারা দেশের উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য প্রদর্শন করতে পারবেন। নির্দিষ্ট এই ওয়েবসাইটে উদ্যোক্তাদের রেজিস্টেশনের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার (এক্সেস) দেয়া হবে, যাতে করে তারা নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের ছবি, অডিও-ভিডিও ও গুণাগুণ প্লাটফর্মে যুক্ত করতে পারেন। চলতি বছরের মধ্যেই এ ওয়েবসাইট উদ্বোধনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
প্রাথমিকভাবে ৫০ উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হবে। উদ্যোক্তারা প্রশিক্ষণ পাবেন অনলাইনে। আগামী এক বছরের মধ্যে এই প্লাটফর্মে এক হাজারের বেশি প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে এসএমই ফাউন্ডেশনের।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "প্রশিক্ষণ দিয়ে ধাপে ধাপে উদ্যেক্তাদের যুক্ত করা হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে, তবে কোন ফি দিতে হবে না"।
ওয়েবসাইটটিতে ভাল মানের ১৫ হাজারের বেশি ছবি আপলোড করা যাবে। সেই সঙ্গে পণ্যের দাম, গুণাগুণ ও ক্যাটালগ অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই লেখা যাবে।
ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, "বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সপ্তাহব্যাপী এসএমই মেলা শুরু হবে ২০ নভেম্বর থেকে। এ মেলা শেষ করে তার পরে চালু করবো ডিজিটাল ডিসপ্লে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে"।
ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, "আমরা মনিটরিং করবো যাতে কোন উদ্যোক্তা বিদেশি পণ্য ওয়েবসাইটে আপলোড করতে না পারে। এসএমই ফাউন্ডেশনের একজন এডমিন ছ্বিগুলো অনুমোদন (অ্যাপ্রুভ) করবেন। একসেস টু ইনফরমেশন -এটুআইয়ের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে। তারা টেকনিক্যাল বিষয় পরীক্ষা করছে"।
সাবাব লেদারের প্রতিষ্ঠাতা মাকসুদা খাতুন টিবিএসকে বলেন, "খুবই সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। উদ্যোক্তারা বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে কিন্তু অনেক উদ্যোক্তাই তাদের পণ্যের প্রচারণা চালাতে পারছেন না। এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্যের পরিচিতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়বে এবং পণ্যের বিক্রিও অনেকগুণ বাড়বে বলে আশা করছি"।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ৬০ লাখ কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (সিএমএসএমই) রয়েছেন। এসব উদ্যোক্তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেতে এ ডিসপ্লে সেন্টার সহায়ক হবে বলে মনে করে এসএমই ফাউন্ডেশন।
ওয়েবসাইটে পণ্যে ও সেবা তুলে ধরতে ক্লাস্টার ভিক্তিতে আলাদা ক্যাটাগরি থাকবে। হস্তশিল্প, গার্মেন্টস, চামড়া শিল্প, জামদানি, নকশি কাঁথা, পাটের বহুমুখী পণ্য, ছোটখাটো গয়না থেকে শুরু করে দেশে ছড়িয়ে থাকা ১৭৭টি ক্লাস্টার ভিত্তিক বিভিন্ন পণ্য। তবে এসব পণ্য সরাসরি ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার দেয়ার সুযোগ থাকবে না। উদ্যোক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে পণ্য ক্রয় করা যাবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, "আমাদের বিভিন্ন ক্লাস্টারের উদ্যোক্তারা আছেন। আমাদের উদ্যোক্তারা কী বানাচ্ছেন এটার সম্পর্কে দেশি বা বিদেশি ক্রেতাদের ধারণা থাকে না। অনেক সময় বিদেশি দূতাবাস থেকে আমাদের জানানো হয়, 'তোমরা যে জিনিস বানাও সেগুলো আমাদের দেখাও'। এখন এ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তারা সহজেই পণ্য দেখতে পারবেন। সরাসরি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পণ্য কিনতে পারবেন। যোগাযোগের জন্য উৎপাদনকারীর নাম, মোবাইল নাম্বার ও ইমেল থাকবে"।
উদ্যোক্তারা উৎপাদিত পণ্যর ছবি যেন ভালভাবে তুলতে পারে ও সঠিক মার্কেটিং করতে পারে সে বিষয় প্রশিক্ষণ দিবে এসএমই ফাউন্ডেশন।
ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, "পণ্যের ছবিটা কিভাবে তুলবে, কিভাবে ইন্টারনেটে দিবে, কাস্টমারের সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ করবে-এগুলোর বিষয়ে আমরা ট্রেনিং দিবো। আমরা উদ্যেক্তাদের এ ব্যাপারে অনলাইনে ট্রেনিং দেয়া শুরু করেছি"।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সমীক্ষা অনুসারে, বাংলাদেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান এসএমই খাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশে প্রায় ৬০ লাখ এসএমই উদ্যোক্তা রয়েছেন। দেশের মোট ৯০ শতাংশ শিল্প ইউনিট এসএমই খাতের অন্তর্ভুক্ত। সেই সঙ্গে শিল্প-কারখানায় নিয়োজিত মোট শ্রমিকের ৮৭ শতাংশ এবং মোট সংযোজিত পণ্যের ৩৩ শতাংশ এসএমই খাতের অন্তর্ভুক্ত। এসএমই খাতে তুলনামূলক স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।
তবে এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান হচ্ছে ২৫ শতাংশ। আর সামগ্রিকভাবে শিল্প খাতে এসএমই'র অবদান ৩২ শতাংশ। আসন্ন ৪র্থ শিল্প বিপ্লব ও টেকসই উন্নয়নে এসএমই খাতের বিকল্প নেই বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।