অগ্রাধিকারমূলক কর সুবিধা চায় এসএমই
দেশের ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়নে আসন্ন বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) জন্য পৃথক কর, শুল্ক ও ট্যারিফ কাঠামো চেয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
এই লক্ষ্যে রাষ্ট্র পরিচালিত অলাভজনক সংস্থাটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে একটি ৫৬-দফা সুপারিশ পাঠিয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন অনুসারে, অগ্রাধিকারমূলক কর ব্যবস্থা এমন একটি বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যেখানে অন্যদের তুলনায় স্বল্প করহারের সুযোগ পায় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এসএমই'র জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রস্তাবটি পাঠানো করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে প্রায় ৭৮ লাখ মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এমএসএমই) শিল্প রয়েছে। প্রায় ২.১ কোটি জনশক্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতে নিযুক্ত।
"দেশের বেশিরভাগ ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প ছোট এবং মাঝারি আকারের; তাই এসএমই উদ্যোক্তাদের সুবিধা দেওয়া উচিত," যোগ করেন তিনি।
মফিজুর রহমান আরও বলেন, "২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গঠনকে ত্বরান্বিত করবে এই খাতের উন্নয়ন।"
এসএমই'র প্রস্তাবনা
প্রস্তাবনায় আয়কর সংক্রান্ত ২২টি, ভ্যাট সংক্রান্ত ১৫টি এবং শুল্ক সংক্রান্ত ১৯টি সহ মোট ৫৬টি সুপারিশ করা হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন প্রস্তাব করেছে, রাজস্ব বোর্ড যাতে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) যৌক্তিক সংজ্ঞা সহ একটি সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশ (এসআরও) জারি করে।
বর্তমানে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা জাতীয় শিল্প নীতি-২০২২-এ উল্লিখিত সংজ্ঞা অনুযায়ী ঋণ পান।
তবে এনবিআরের রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ায় এ শব্দটির কোনো সংজ্ঞা নেই।
তাছাড়া, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য প্রথমবারের মতো স্মল বিজনেস ট্যাক্স রেটের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়, বার্ষিক টার্নওভারের উপর ভিত্তি করে মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য যাতে যথাক্রমে ১২% ও ১৫% কর্পোরেট আয়করের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়; যা বর্তমানে ২২.৫%।
এছাড়া, পুঁজিবাজারের মূল বোর্ডে কোম্পানিগুলোর জন্য যেমন নির্ধারিত আইপিও সুবিধা রয়েছে, তেমনি এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত করার জন্য ছোট কোম্পানিগুলোতে ১৫% কর্পোরেট আয়কর প্রস্তাব করা হয়েছে।
ফাউন্ডেশন আরো প্রস্তাব করে, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোগে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের উপর অগ্রিম আয়কর যাতে ৭% থেকে ২% এ নামিয়ে আনা হয়।
করমুক্ত থ্রেশহোল্ড বৃদ্ধি এবং এসএমই খাতের জন্য করের হার আরও কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
বর্তমানে এই খাতের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ লাখ টাকা; নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এটি ৭০ লাখ টাকা। তাছাড়া ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভার করের হার ৪% নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়, অনানুষ্ঠানিক খাতের উদ্যোক্তাদের এসএমই ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত 'জাতীয় এমএসএমই ই-ডেটাবেস'-এ তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য তাদেরকে যাতে ৫-১০ বছরের কর অব্যাহতি দেওয়া হয়।
প্রস্তাবের আরেকটি পয়েন্টে মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের ক্ষেত্রে বিক্রিত পণ্য এবং স্টল ভাড়ার উপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার জন্য একটি আইনি বিধান অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
মূসক কর্মকর্তাদের নিরীক্ষার জন্য পূর্ববর্তী পাঁচ আর্থিক বছরের সমস্ত নথি এবং হিসাব রাখার নীতির জায়গায় তিন বছরের হিসাব রাখার নীতি চালুর প্রস্তাব জানিয়েছে ফাউন্ডেশন।
এর ওপর এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য মাসিক ভিত্তিতে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের বদলে বার্ষিকভাবে রিটার্ন দাখিলের নিয়ম চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।
বিদ্যমান নিয়ম অনুসারে, যেকোন পরিস্থিতিতে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে হয় এবং রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়।
বাংলাদেশের এসএমই খাত
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৭.০৭%, যেখানে এসএমই খাতের অবদান ২৮%।
২০২৪ সালের মধ্যে এসএমই খাতের অবদান ৩২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকার একটি এসএমই নীতি প্রণয়ন করেছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন বলছে, এসএমই খাত চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপিতে ৬০% থেকে ৭০% অবদান রাখে।