দেশে নতুন করে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে: গবেষণা
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশে নতুন করে এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে বলে জানিয়েছে সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (বিআইডিএস)।
সংস্থাটি বলেছে, মহামারির আগে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ শতাংশ। কিন্তু সংক্রমণ শুরুর পর টানা দুই মাসের সাধারণ ছুটিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ায় দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়ে গেছে ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীর সংখ্যা চার কোটি ৮০ লাখ।
বুধবার (২৪ জুন) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে রিসার্চ ডিরেক্টর বিনায়ক সেনের করা "পোভার্টি ইন দ্য টাইম অব করোনা: শর্ট-টার্ম ইফেক্টস অব ইকোনমিক স্লোডাউন অ্যান্ড পলিসি রেসপন্সেস থ্রু সোশ্যাল প্রোটেকশন" শীর্ষক এক গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
ওয়েবিনারে বিনায়ক সেন জানান, কোভিড-১৯-এর প্রভাব কাটাতে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয়। এতে যেমন দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, অন্যদিকে কোভিডের আগেই যাঁরা দরিদ্র ছিলেন, তাঁদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
গবেষণায় বলা হয়, ২০২০ সালের শুরুতে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে শহরে ১৫ দশমিক ৮ ও গ্রামে ২২ শতাংশ। তবে চলতি বছর শেষে গ্রামে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ২৩ এবং শহরে ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ হতে পারে। এক্ষেত্রে গ্রামের চেয়ে শহরে দারিদ্র্যের হার বাড়বে। বছরের শেষে দেশে চরম দারিদ্র্য থাকবে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা বছরের শুরুতে ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, গত লকডাউনে দেশে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়ার মধ্যমমান হিসাবে এই সংখ্যা পাওয়া গেছে। ২০১০ থেকে ২০১৬ মেয়াদে এসব এলাকায় দরিদ্র মানুষ বেড়েছে। করোনায় সরকার দরিদ্র মানুষের জন্য যে সহায়তা ঘোষণা করেছে সেটি দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি যারা আছে তাদের জন্য। কিন্তু যারা আগে থেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ সময়ে। কোভিড-১৯ না থাকলে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের আগেই দারিদ্র্য বিমোচন করতে সক্ষম হতো। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দারিদ্র্য নির্মূল করতে হলে আগামী ১ দশক গড়ে ৮ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে এই ক্ষতি পূরণ করা যাবে না। বরাদ্দ বাড়িয়েও লাভ হবে না, কারণ এই ভাতা ও সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ভুল মানুষ বাছাই করার প্রবণতা আছে দেশে। ফলে যাদের দরকার, তাদের অনেকেই তালিকায় ঢুকতেই পারেন না।
গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করে তিনি দেখান, সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন ভাতা বিতরণে অদরিদ্র ও সচ্ছল মানুষের সংখ্যা ৩০ শতাংশ, খাদ্যসহায়তার ক্ষেত্রে সেটা ৩২ শতাংশ, মাতৃত্বকালীন ভাতার ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ, বৃত্তির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ।
ওয়েনবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদের সঞ্চালনায় সেখানে বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যের অলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস আর ওসমানি, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মো. মোশতাক হোসেন, পরিকল্পনা সচিব আসাদুল ইসলাম।
বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেনের পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণার আলোকে উপস্থাপনা তুলে ধরেন গবেষক মঞ্জুর হোসেন, কাজী ইকবাল এবং নাহিয়ান আজাদ টুসি।