দেশে প্রথম অটোমেটেড পাস্তুরাইজড মিল্ক ফ্যাক্টরি ইয়ন গ্রুপের
হাতের স্পর্শ ছাড়া মানুষের কাছে দুধ পৌঁছে দিতে দেশে প্রথমবারের মতো অটোমেটেড পাস্তুরাইজড মিল্ক ফ্যাক্টরি চালু করেছে ইয়ন গ্রুপ।
গরুর মিল্কিং, পাস্তুরাইজেশন, হোমেজিনাইজেশন ও প্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হবে হাতের স্পর্শ ছাড়া। দুধের পাশাপাশি ঘি, দই ও আইসক্রিমের মতো অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করা হবে।
'বাকারা' ব্র্যান্ড নামে ইয়ন হাইটেক ডেইরি ফার্মের পাস্তুরাইজেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয় শনিবার। রংপুরের বদরগঞ্জে খামারটি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এস এম রেজাউল করিম উদ্বোধন করেন।
খামারে গরুর খাদ্য প্রদান থেকে শুরু করে সব প্রক্রিয়া মেশিনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এরপর ফার্মের প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট দুধ থেকে ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক এবং আফলাটোক্সিন আলাদা করা হয়। এই দুধগুলো বাজারে ৫০০ মিলিলিটার এবং ১০০০ মিলিলিটারের প্যাকে পাওয়া যাবে। ফ্যাট ও ফ্যাটবিহীন আলাদা দুটি ফ্লেভারের দুধ পাওয়া যাবে বাজারে।
ইয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিন-উদ-দৌলা বলেন, 'গাভীর দুধ দোয়ানো থেকে শুরু করে দুধের প্যাকেজিং পর্যন্ত সব কাজ পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। পাস্তুরিত দুধের পাশাপাশি আমরা শিগগির গুড়া দুধও বাজারজাত করব।'
সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি বড় শেডে গরুগুলোকে লিঙ্গ ও বয়স ভেদে আলাদা করে রাখা হয়েছে। সুইডেনের ডি লেভেল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি নকশা অনুযায়ী ইয়ন বায়োসায়েন্স ডেইরি ফার্মের এ শেডগুলো তৈরি। দুধ দোয়ানের জন্য স্থাপন করেছে স্বয়ংক্রিয় মিল্কিং পার্লার।
খামারের উপদেষ্টা ডা. একেএম সিরাজুল হক বলেন, 'আমরা পুরো প্রক্রিয়াটিতে কোনোভাবেই হাতের ব্যবহার করছি না। নিয়ন্ত্রিত মেশিনে নিরাপদ দুধ উৎপাদনের সব কাজ করা হয়।'
এ ছাড়া, প্রতিটি গাভীর স্বাস্থ্য, খাবার গ্রহণ, ওষুধ প্রয়োগ ও প্রজনন পর্যবেক্ষণের জন্য আইওটি সেন্সর স্থাপন করা হয়েছে খামারে।
এর আগে, ২০১৯ সালের শেষদিকে বদরগঞ্জের সন্তোষপুর গ্রামের ৫০ একর জমিতে এই দুগ্ধ খামার নির্মাণ করা হয়। তখন অস্ট্রেলিয়া থেকে বিমানে করে ২২৫টি হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরু আমদানি করেছিল ইয়ন গ্রুপ। গরুগুলো এখন এই খামারে লালন-পালন করা হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে শুরু হওয়ার এক বছরের ব্যবধানে খামারে নতুন ১৯৮টি বাছুরও জন্ম নিয়েছে।
এখনই খামারটিতে দৈনিক ২ হাজার লিটার গরুর দুধ উৎপাদন হয়। খুব শিগগিরই তা ১০ হাজার লিটারে উন্নীত হবে জানিয়েছেন এর কর্মকর্তারা। নিজেদের গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এর বাজারজাত করা হবে বলেও জানান তারা।
মোমিন উদ দৌলা বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে বার্ষিক দুধ উৎপাদন ১০ গুণ বেড়েছে। দেশে এখনো প্রতি বছর দুধ, বিশেষ করে গুঁড়ো দুধ আমদানি করতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়।
খামার বড় করার মাধ্যমে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন মোমিন উদ দৌলা।
২০০০ সালে ছোট পরিসরে কার্যক্রম শুরু করা ইয়ন অ্যানিমেল হেলথই এখন একটি বৃহৎ গ্রুপ প্রতিষ্ঠান। গ্রুপটির ২০টি প্রতিষ্ঠানে কর্মীসংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। মাছ, শস্য, গবাদিপশু খামার ছাড়াও অ্যানিমেল হেলথ, পোল্ট্রি ফিড এখন কোম্পানিটির বড় ব্যবসা।
২০০৬ সাল থেকে শস্য বা বীজ উৎপাদন শুরু করে এ খাতেও বড় নাম ইয়ন গ্রুপ। ইয়ন ফুড নামে পোল্ট্রিজাত খাবার খাবার প্রক্রিয়াকরণের একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে এ গ্রুপের।