নগরায়ন ও মহামারির মাঝে দ্রুত বাড়ছে নুডলসের বাজার
দেশে নগরায়নের প্রভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে জনপ্রিয় স্ন্যাক আইটেম নুডলসের বাজার। এছাড়া, করোনার বিধিনিষেধের কারণে রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে বেড়েছে নুডুলসের চাহিদা। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানি বাজার নিয়েও আশাবাদী উদ্যোক্তারা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে নুডলসের প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। গত কয়েক বছরে বাজারের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিলো প্রায় ১০ শতাংশ। তবে, করোনার সময় স্থানীয় বাজারে প্রায় ১৬ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। মহামারির কারণে মানুষ ঘরে বেশি থাকায় বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে, এই প্রবৃদ্ধি শুধু দেশের বাজারেই নয়। সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে নুডলসের রপ্তানি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরায়ন ও মানুষের কর্মমুখী জীবনযাত্রার প্রভাবে স্বাভাবিকভাবেই নুডলসের বাজার বেড়ে চলছিল। দেশে নুডলসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান নেসলে, কোকোলার পাশাপাশি বাংলাদেশের জায়ান্ট প্রাণ-আরএফএল, বসুন্ধরা, স্কয়ার ও ইফাদসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় নেমেছে। ছোট ছোট বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও বিনিয়োগ করেছে নুডলসের বাজারে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মানুষ যখন বেশি করে ঘরে থাকছে তখন তাদের মধ্যে স্ন্যাকস গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। স্ন্যাকসের মধ্যে একটি জনপ্রিয় আইটেম নুডলস। যা দিয়ে দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ করা সম্ভব। ফলে, এই সময় নুডলসের বাজার বাড়ছে।"
প্রাণের উৎপাদিত পণ্য মি. নুডলস ব্র্যান্ড দেশে জনপ্রিয় নুডলসগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বাজারে দুই ধরনের নুডলস পাওয়া যায়। এগুলো হলো ইনস্ট্যান্ট নুডলস এবং স্টিক নুডলস। স্বল্পসময়ে তৈরি করা সম্ভব বলে নুডলস হিসেবে ইনস্ট্যান্ট নুডলসের চাহিদাই বেশি।
বাজারে বিক্রিত মোট নুডলসের ৬০ শতাংশের বেশি ইনস্ট্যান্ট নুডলস। বিভিন্ন ধরনের সবজি, মাংস, মসলা, ডিম দিয়ে তৈরি করা কোনো কোনো ইনস্ট্যান্ট নু্ডলস কেবল গরম পানি ঢেলে দিলেই খাওয়ার উপযোগী হয়। অন্যদিকে, স্টিক নুডলস সিদ্ধ করে পছন্দ মতো সবজি, মাংস বা ডিম মিশিয়ে তৈরি করতে হয়।
ইনস্ট্যান্ট নুডলসের বাজারে শীর্ষে রয়েছে নেসলে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মোট বাজারের ৩০ শতাংশ দখলে নিয়েছে নেসলের ম্যাগি নুডলস।
নেসলে বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর নকিব খান বলেন, "ইনস্ট্যান্ট নুডুলসের বাজার বাড়ছে এবং ম্যাগি এই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। ম্যাগির লক্ষ্য হলো ভোক্তাদের রান্নাঘরে সহযোগী হয়ে উঠার মাধ্যমে তাদের পছন্দের সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরিতে সাহায্য করা। নেসলে গত কয়েক বছরে ম্যাগি মাসালা ব্লাস্ট, ম্যাগি ফুজিয়ান ব্যাংকক সুইট চিলি নুডলস বাজারে এনেছে। তরুণ ও কিশোরদের মধ্যে মাসালা ম্যাগি থেকে অনুপ্রাণিত মাসালা ব্লাস্ট দারুণ জনপ্রিয়।"
তিনি বলেন, ম্যাগি সবসময় বাংলাদেশি ক্রেতাদের জন্য আকর্ষণীয় নতুন স্বাদের পণ্য নিয়ে আসে। ব্যাংকক সুইট চিলির মতো নুডুলস ব্যাংককে ভীষণ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে উদ্যমী তরুণদের জন্য ম্যাগি ফুজিয়ান নামের নতুন শাখার মাধ্যমে এই নুডলসটি নিয়ে এসেছে বলে জানান তিনি।
নেসলে বাংলাদেশ ও প্রাণ-আরএফএলের বাইরে নুডলসের বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছে কোকোলা। পাশাপাশি নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাজারে নুডলস এনেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বাজার দখলে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও বড় মার্কেটিং করছে তাদের কুলসুম ব্র্যান্ডের নুডলসও।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে এক হাজার কোটি টাকার বেশি নুডলস বিক্রি হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি থেকে নিজেদের সুরক্ষায় মানুষ ঘরমুখো হওয়ার কারণে হোটেলের উপর নির্ভরতা কিছুটা কমেছে। আর তাই, বাসায় দ্রুত তৈরি করা যায় এমন খাবারের বাড়তি জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে।
স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর শেষে বাজারে বিক্রির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইনস্ট্যান্ট নুডুলসের বাইরে বাজারে যেসব নুডলস পাওয়া যায় তার মধ্যে চপস্টিক ব্র্যান্ডের নুডলসে কোনো প্রকার টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয় না। পণ্যটি তৈরি ও বাজারজাত করছে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিএফও) পারভেজ সাইফুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নুডুলসের বাজারে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার একটা প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু, পরিবর্তে আমাদের বিক্রি বেড়েছে।"