প্রণোদনার ঋণে গ্রাহক পাচ্ছে না প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক
কোভিড পরিস্থিতিতে বিদেশে চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরা শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও ঋণগ্রহীতা পাচ্ছে না ব্যাংকটি। অর্থবছরের প্রথম আটমাস শেষে বরাদ্দের মাত্র ৬ শতাংশ বিতরণ করতে পেরেছে ব্যাংকটি। ঋণ বিতরণ বাড়াতে শাখা পর্যায়ে কোনরকম প্রচার-প্রচারণাও নেই প্রবাসী ও বিদেশে যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের ঋণদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রায়ত্ব এ ব্যাংকটির।
কোভিড পরিস্থিতিতে কর্মহীন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, দেশ-বিদেশে কর্মহীন হওয়া শ্রমিক ও গ্রামের দরিদ্রদের মাঝে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে মূলধন যোগান দিয়ে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকা করে মোট ২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সরকার। প্রতিষ্ঠান চারটি এ পর্যন্ত এক লাখ ৫৭ হাজার মানুষকে ৭৮০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।
গত আগস্টে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ২৫০ কোটি টাকা করে ছাড় দেয় অর্থমন্ত্রণালয়। তিনটি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দের অর্থ বিতরণ শেষ করায় তাদেরকে অবশিষ্ট ২৫০ কোটি টাকা করে ছাড় করছে অর্থমন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এখন পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে মাত্র ৩০ কোটি টাকা।
২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ৭১টি শাখার মাধ্যমে বিদেশ ফেরত ও বিদেশে যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৪২ হাজার বিদেশগামী কর্মীকে ঋণ বিতরণ করেছে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনার ৫০০ কোটি টাকা বিতরণেও বরাবরের মতোই নির্জীব ব্যাংকটি। ফলে তহবিল পাওয়ার পরের ছয় মাসে মাত্র ১৬০৬ জনকে ঋণ দিতে পেরেছে ব্যাংকটি।
প্রান্তিক পর্যায়ে প্রণোদনার অর্থ বিতরণ বাড়িয়ে সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের আয় বাড়াতে এ অর্থ বরাদ্দ দিলেও ঋণ বিতরণ বাড়াতে কোন ধরণের বাড়তি চেষ্টা নেই ব্যাংকটির। গত জানুয়ারির পর যেসব প্রবাসী দেশে ফিরেছেন, তাদের ৪ শতাংশ সুদে এবং বাকিদের ৭-৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার কথা ব্যাংকটির।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, তাদের জনবল খুবই কম। তাছাড়া, করোনার কারণে তারা বিদেশ ফেরত ও বিদেশগামী কর্মীদের ঋণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারেননি। তবে যারা নিজ উদ্যোগে ঋণের জন্য শাখায় এসেছেন, তাদের কাউকে ফেরত দেওয়া হয়নি। তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রিন্সিপাল এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মাদ কামাল হোসেন বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'জনবল সংকট ও করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রণোদনার টাকা বিতরণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি। আমাদের কাছে যারা আবেদন করেছে, তাদের সবাইকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই বাকি টাকা বিতরণ হয়ে যাবে'।
করোনাকালে সরকারের প্রণোদনার অর্থ সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে পিকেএসএফ। সংস্থাটি প্রথম পর্যায়ে ছাড় পাওয়া ২৫০ কোটি টাকা প্রায় ৮৪ হাজার কর্মহীন, প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের মাঝে ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে।
পিকেএসএফ তাদের সহযোগি সংস্থার মাধ্যমে এই ঋণ বিতরণ করেছে। আগস্টে প্রথম ধাপের টাকা পাওয়ার পর নভেম্বরে সহযোগি সংস্থাগুলোর মাঝে তা বিতরণ করার পর ডিসেম্বরে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।
পিকেএসএফ সহযোগি সংস্থাগুলোকে ৫ শতাংশ সুদে এবং সহযোগি সংস্থাগুলো ১৮ শতাংশ সুদে দুই বছর মেয়াদে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ বিতরছে সরকার। সিটি করপোরেশন ও জেলা শহর এলাকার বাইরে এ ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। একজন ঋণগ্রহীতা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন।
পিকেএসএফের ডিএমডি মো. জসীম উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'চলতি সপ্তাহেই সরকার থেকে বাকি ২৫০ কোটি টাকা পাব। এই টাকা থেকে যাদের ঋণ দেওয়া হবে, ইতোমধ্যে তাদের তালিকা করা হয়েছে। টাকা পেলেই দ্রুত বিতরণ করা সম্ভব হবে'।
জসিম উদ্দিন বলেন, 'গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পিকেএসএফ সহযোগি সংস্থাগুলোকে ২২০০ কোটি টাকা দিয়েছি আমরা। আর সংস্থাগুলো মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করেছে ২৭,৫০০ কোটি টাকা'।
রাষ্ট্রায়ত্ব কর্মসংস্থান ব্যাংকও প্রথম ধাপে পাওয়া ২৫০ কোটি টাকা ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫,২৬৬ গ্রাহকের মাঝে ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে। সর্বোচ্চ ৫ বছর মেয়াদে এই ঋণ হিসেবে ব্যাংকটি।
কর্মসংস্থান ব্যাংকের চেয়ারম্যান কানিজ ফাতেমা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে প্রথম ধাপের টাকা বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ২৫০ টাকাও দ্রুত বিতরণ শুরু করবো। সারাদেশে ২৫৫টি শাখার মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ করায় বেশি সময় লাগবে না'।
প্রায় ৫৬ হাজার গ্রাহকের মাঝে গত ডিসেম্বরেই ২৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ শেষ হয়েছে বলে টিবিএসকে জানিয়েছেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর হোসেন। তিনি বলেন, 'ব্যাংকের গ্রাহকরা ৫ শতাংশ সুদে এ ঋণ পেয়েছেন। বাকি ২৫০ কোটি টাকা ছাড় করতে অর্থমন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি আমরা'।
'প্রণোদনা থেকে পুরনো গ্রাহকদের নতুন করে ঋণ দিয়ে তাদের কর্মে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া, নতুন গ্রাহকদেরও ঋণ দিয়েছি আমরা'- যোগ করেন তিনি।