প্রথমবারের মতো সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে কাঁচা টমেটো
প্রথমবারের মতো সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে কাঁচা টমেটো। গত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে ৭৫ মেট্রিক টন কাঁচা টমেটো। মালয়েশিয়ার বাজারে এসব টমেটো বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় কেজি প্রতি গড়ে ৫০ টাকায়।
টমেটোর মৌসুমে যেখানে ৫ থেকে ১০ টাকায় কেজি বিক্রি হয় সেখানে সমুদ্রপথে টমেটো রপ্তানি কৃষকের মুখে হাসি নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশের প্রায় সকল অঞ্চলে টমেটোর প্রচুর চাষ হয়। ক্ষেত থেকে টমেটো সংগ্রহ করে তা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে জাহাজীকরণ সম্ভব হলে রপ্তানি বাড়বে। এই খাত থেকে বাংলাদেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য মতে, প্রতি বছর সমুদ্রপথে গোল আলু, বাধাকপি, কচুর লতিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্য, বাহারাইন, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাইসহ বেশ কয়েকটি দেশে। চট্টগ্রাম ভেজিটেবল এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন এর তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিবছর ২০ মিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন সবজি রপ্তানি হলেও টমেটো রপ্তানি হতো না। এ বছরই সমুদ্রপথে রপ্তানি হওয়া সবজির তালিকায় নতুন করে সংযুক্ত হলো কাঁচা টমেটো।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ পরিচালক মো: নাছির উদ্দিন বলেন, 'ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সিএসএস ইন্টারন্যাশনাল সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান শাহরিয়া ট্রেডিং এর কাছে ৭৫ মেট্রিক টন কাঁচা টমেটো রপ্তানি করেছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২৫ টন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২৫ টন এবং ৬ মার্চ ২৫ মেট্রিক টন টমেটো রপ্তানির জন্য ছাড়পত্র দিয়েছি আমরা'।
রপ্তানিকারক সিএসএস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল বলেন, 'মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশি টমেটোর চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রথমবারের মতো আমরা সমুদ্র পথে কাঁচা টমেটো রপ্তানি করেছি। ক্ষেত থেকে টমেটো সংগ্রহ করে মালয়েশিয়ার বাজারে পৌছানো পর্যন্ত সময় লেগেছে ১১ দিন। এই সময়ের মধ্যে টমেটোগুলো পেঁকে যায়'।
তিনি আরো বলেন, সরকার সবজি রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০ ভাগ আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করে। এ ছাড়াও দেশীয় বাজারে টমেটোর দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় কম থাকায় এই পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা লাভের সুযোগ আছে।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জানায়, রপ্তানির জন্য ক্ষেত থেকে পরিপূর্ণ সাইজের টমেটো বাছাই করা হয়। যাতে ভোক্তা পর্যায়ে যাওয়া পর্যন্ত এগুলোর গুণগত মান অক্ষুন্ন থাকে এবং ওই সময়ের মধ্যে টমেটো লাল রং ধারণ করে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সুপারশপে এগুলো বিক্রি হয়। প্রবাসী বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের অধিবাসীরাও টমেটোর গ্রাহক।
সিএসএস ইন্টারন্যাশনালের টমেটোর চালান ফরোয়ার্ডিংয়ের দায়িত্বে ছিল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্কাই সীল্যান্ড শিপিং লাইন।
স্কাই সীল্যান্ডের স্বত্বাধিকারী রেজাউল করিম বলেন, '৪০ ফুট সাইজের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কন্টেইনারে করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয় টমেটোর চালান। এটি মালয়েশিয়ায় পৌঁছতে সময় লাগে ৪ দিন'।
তিনি আরো বলেন, 'পণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়াগত কারণে সময়ক্ষেপন হয়। অনেক সময় একটি পণ্যের চালান বন্দরে আসার পরও ৫ থেকে ১০ দিন লেগে যায়। কাঁচা টমেটো রপ্তানির ক্ষেত্রে দুই বা সর্বোচ্চ তিনদিনের মধ্যে পণ্য জাহাজীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের অন্যান্য বন্দরে এ ধরনের পণ্য দুই একদিনের মধ্যে জাহাজীকরণ হয়। আমাদের এখানে রপ্তানিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন এবং প্রক্রিয়াগত জটিলতায় সময়ক্ষেপন হয়। এ জন্য সমুদ্রপথে সবজি রপ্তানিতে আগ্রহী হতে চান না ব্যবসায়ীরা'।
চট্টগ্রাম ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো: ফোরকান রুবেল বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি সবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সাধারণ আকাশপথে সবজি রপ্তানি হয়। তবে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমুদ্রপথে ৫-৬ দিন দুরত্বের দেশগুলোতে টমেটো রপ্তানি শুরু করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কায়ও টমেটো রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
তিনি সবজি রপ্তানির ক্ষেত্রে কোল্ড স্টোরেজ, প্রসেসিং সেন্টারসহ পণ্য রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্ট সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা গেলে সবজি রপ্তানি করে বাংলাদেশের আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।