ফের বাড়তে পারে রপ্তানিখাতের প্রণোদনার ঋণ পরিশোধের সময়সীমা
গতবছর মার্চে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘোষিত ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে গার্মেন্টসহ রপ্তানিখাতের শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন ভাতা বাবদ সরকারের দেওয়া প্রণোদনার অর্থ পরিশোধের সময়সীমা দ্বিতীয়বারের মতো বাড়তে পারে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যেই এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাবদ ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫০০০ কোটি টাকা এবং বৃহৎ শিল্প ও সেবাখাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে আরও ৫০০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো। ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ড শেষে গত ডিসেম্বর থেকে ১৮ কিস্তিতে এসব ঋণ পরিশোধের শর্ত ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। পরে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গ্রেস পিরিয়ড আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
রপ্তানি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ফিরলেও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ওই ঋণ পরিশোধে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বাড়তি সময় চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। সর্বশেষ আবেদনে গ্রেস পিরিয়ড আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করেছে সংগঠন দুটি।
'পোশাক মালিকদের ঋণ পরিশোধের গ্রেস পিরিয়ড ৩০ জুন পর্যন্ত আছে। সময় বাড়ানোর বিষয়ে তারা যে আবেদন করেছেন, তা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে কাজ করছে'—শনিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান অর্থমন্ত্রী।
আগামী ঈদ-উল-আযহায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে গতবারের মতো প্রণোদনা চেয়েছেন মালিকরা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের কারণে দেশে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র হয়েছে বলে বিভিন্ন বেসরকারি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কিন্তু এতদিন এসব প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি অর্থমন্ত্রী।
গত সপ্তাহে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক অনুযায়ী, দেশে এখন দরিদ্রের সংখ্যা সাড়ে ৬ কোটি।
এ তথ্য গ্রহণ করবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'বিবিএসের এ তথ্য এখনও আমার কাছে আসেনি। নতুন যারা দরিদ্র হয়েছে, তাদের আইডেনটিফাই করা হবে। আর ইতোমধ্যে যাদের আইডেনটিফাই করা আছে, তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।'
তিনি বলেন, নতুন করে শুরু হতে যাওয়া শাটডাউনে নগর দরিদ্র্যদের জীবনযাত্রায় যাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেটি অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী দেখবেন। যদি এ ধরনের কিছু দেখা যায়, সেগুলো টেক কেয়ার করার জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে।
করোনা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে না পারায় সরকারের উদ্বেগ রয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'একটা বিষয়ে আমিও কনসার্ন। আমরা কিছুটা কনসার্ন। ভ্যাকসিনেশন ইজ মাস্ট। এটা যত দ্রুত সম্ভব, করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।'
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই চলতি অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ বিভিন্ন খাতে অপচয় বন্ধে অর্থ ছাড়ে লাগাম টানা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'বিভিন্ন খাতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, আমরা তা দিতে প্রস্তুত। তবে অপচয়ের জন্য অর্থ ছাড় করা হবে না।'