বছরে ২০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আনবে এসআর কেমিক্যালস
দেশীয় প্রতিষ্ঠান এসআর কেমিক্যাল ইন্ডাজট্রিতে কষ্টিক সোডা, ব্লিচিং ফাইন ও ব্লিচিং পাউডারসহ সাত ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদিত হলে দেশের কাপড় ও কাগজ শিল্পে বছরে ২০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এমন দাবি করেন বগুড়ায় প্রতিষ্ঠিত এসআর কেমিকেল ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আসিফ রব্বানী। শুধু তাই নয়, শিল্প স্থাপনের আগে বাজার পর্যালোচনায় তারা নিশ্চিত হয়েছেন, এ প্রতিষ্ঠানে যেসব পণ্য উৎপাদিত হবে তার বাজার এখনই তৈরি আছে বলেও জানান তিনি। ভারত, শ্রীলংকা, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ ধরনের রাসায়নিক পণ্যের ভালো চাহিদা রয়েছে।
আসিফ রব্বানী আরও জানান, 'উৎপাদন শুরু হওয়ার আগেই বছরে ১২ হাজার টন ব্লিচিং ফাইন নেবে বলে জানিয়েছে চীনা কোম্পানি ডিজু কেমটিকস কেমিকেল কোম্পানী লিমিটেড। তবে বাইরে রপ্তানি করার আগে দেশের চাহিদা পুরণে অগ্রাধিকার দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এই চাহিদা পূরণের পর প্রাথমিক ভাবে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ, ৬ হাজার টন চীনে রপ্তানি করতে পারবো আমরা।'
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়ার শেরপুরে উত্তরাঞ্চলের একমাত্র এবং সবচেয়ে বড় এ প্রকল্প উৎপাদনে যাচ্ছে। এ শিল্প কারখানায় এক হাজার নারী ও পুরুষ কর্মীর সরাসরি কর্মসংস্থান হবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রডাকশন প্রধান মো: রায়হান ফেরদৌস। তিনি জানান, এখানে আর্ন্তজাতিক বাজারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পণ্যের মান ঠিক রাখতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আধুনিক মানের ল্যাবরেটরি ও আর এন্ড ডি শাখা।
'বাংলাদেশে এস আর কেমিক্যালই প্রথম ব্লিচিং ফাইন তৈরি করবে। দেশ ও বিদেশে এ রাসায়নিক দ্রব্যের চাহিদা রয়েছে প্রচুর, শুধুমাত্র ৫০ শতাংশ ব্লিচিং ফাইন রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি বছরে আয় করবে কমপক্ষে ৬০ কোটি টাকা,' বললেন মো: রায়হান ফেরদৌস।
চীন থেকে আসা ২৫ জন প্রকৌশলী ও কর্মীর পাশাপাশি দেশীয় বেশ কিছু সংখ্যক প্রকৌশলী গত দুই বছর ধরে এ প্লান্টের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে যাওয়ার পরও চীনা প্রকৌশলীরা থাকবেন আরও বেশ কিছু দিন।
চীনা মেশিন ও জাপানী প্রযুক্তির সমন্বয়ে এ কোম্পানিতে যে সব রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন হবে তার মধ্যে আছে কষ্টিক সোডা, ব্লিচিং ফাইন, ব্লিচিং পাউডার, হাইড্রো ক্লোরিক এসিড, সোডিয়াম হাইপো ক্লোরাইট ও তরলকৃত ক্লোরিন।
মো: রায়হার ফেরদৌস জানান, এ কোম্পানীতে প্রতিদিন ব্লিচিং ফাইন ও ব্লিচিং পাউডার তৈরি হবে ৪০ টন করে। এ ছাড়া কষ্টিক সোডা উৎপাদন হবে ১০০ টন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড ৩৫ টন, সোডিয়াম হাইড্রো ক্লোরাইট ১২ টন ও তরলকৃত ক্লোরিন ১০টন।
এ সব রাসায়নিক দ্রব্য কাপড় ও কাগজ শিল্পে এবং পানি বিশোধন ও জীবানুনাশক তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ রব্বানী।
তিনি আরও জানান, ১০০ বিঘা জমির ওপর এসআর গ্রুপের অংগ প্রতিষ্ঠান এসআর কেমিক্যাল জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
এস আর গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বগুড়া -৬ সদর আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মাদ সিরাজ জানান, বহু বছর ধরেই বগুড়ায় একটি ভারী শিল্পকারখানা তৈরির চেষ্টা করছিল সরকার, কিন্তু নানা কারনে তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এস আর কেমিক্যাল ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয়ে বগুড়ায় প্রতিষ্ঠা করছে ওই কোম্পানি।
'এ কোম্পানি তৈরিতে সরকারের সবগুলো দপ্তর বিশেষ করে বিদ্যুৎ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর সহযোগিতা করেছে আন্তরিক ভাবে,' বললেন গোলাম মোহাম্মাদ সিরাজ।
এসআর কেমিকেল ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেডের এমডি আসিফ রব্বানী আরও জানান, এ ফ্যাক্টারির অন্যতম কাঁচামাল বিদ্যুৎ, আর ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সরকারি সহযোগিত ছিলো শুরু থেকেই।
ফ্যাক্টারি স্বাভাবিকভাবে উৎপাদনে থাকলে মাসে সরকার বিদ্যুৎ বিল পাবে অন্তত ৬ কোটি টাকা।