বাংলাদেশের বন্দর দিয়ে নিজেদের পণ্য নিয়ে গেল ভারত
খরচ ও সময় বাঁচাতে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে নিজেদের দেশে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে ভারত। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পরীক্ষামূলক প্রথম চালান হিসেবে আগরতলায় পৌঁছেছে রড ও ডাল বোঝাই চারটি কন্টেইনার।
এজন্য নির্ধারিত মাশুল ও ফি পরিশোধ করেছে ভারত। তবে পরীক্ষামূলক চালান হওয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কোনো ফি আদায় করেনি।
আগরতলা স্থলবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে কন্টেইনারবোঝাই চারটি ট্রেইলার গ্রহণ করেন ত্রিপুরা রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। ডালগুলো যাবে আসাম রাজ্যের গৌহাটির ই.টি.সি. অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইন্ডিয়া লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। আর রড যাবে আগরতলা শহরের এম.এস. করপোরেশন লিমিটেডের কাছে।
গতকাল বুধবার পণ্যগুলো আগরতলায় যাওয়ার কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হবে জানিয়ে একদিন পেছানোর কথা বলে ভারতীয় হাইকমিশন ও কাস্টমস। মূলত মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের জন্যই নির্ধারিত সময়ের একদিন পর পণ্য গেলো আগরতলায়।
কন্টেইনারবোঝাই প্রতিটি ট্রেইলারে জীবাণুনাশক স্প্রের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে বন্দরে ঢোকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
পরীক্ষামূলক এই ট্রানজিট পণ্যচালানের জন্য আগেই ফি নির্ধারণ করে দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও চুক্তি) আকতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে জানা গেছে, প্রতি চালানের জন্য ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি প্রতি ৩০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রতি মেট্রিক টনে ২০ টাকা, সিকিউরিটি চার্জ প্রতি মেট্রিক টন ১০০ টাকা, অ্যাসকর্ট চার্জ প্রতি মেট্রিক টন ৫০ টাকা, বিবিধ প্রশাসনিক চার্জ প্রতি মেট্রিক টন ১০০ টাকা, কন্টেইনার স্ক্যানিং ফি প্রতি কন্টেইনার ২৫৪ টাকা। এছাড়া ইলেকট্রিক লক অ্যান্ড সিল ফি হিসেবে বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত পরিমাণ দিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে সম্পাদিত 'অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভম্যান্ট অব গুডস্ টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া' চুক্তির আওতায় এবং ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর উভয় দেশের মধ্যে সাক্ষরিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুযায়ী বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে নিজ দেশে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে ভারত।
পরীক্ষামূলক প্রথম চালান হিসেবে চারটি কন্টেইনারে করে ৫৩.২৫ মেট্রিক টন রড ও ৪৯.৮৩ মেট্রিক টন ডাল নিয়ে গত ১৪ জুলাই চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় 'সেজুতি' নামের একটি জাহাজ। এ জাহাজটি গত মঙ্গলবার (২১ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নোঙর করে।
বাংলাদেশের 'ম্যাংগো লাইন লিমিটেড' নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারত থেকে পণ্যগুলো পাঠিয়েছে 'ডার্সেল লজিস্টিক লিমিটেড' নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান। আর এসব পণ্য পরিবহনের দায়িত্বে ছিলো কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।
জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের পর বুধবার (২২ জুলাই) ভোর রাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে রড ও ডালবোঝাই কন্টেইনার নিয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় চারটি ট্রেইলার। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪ টায় আখাউড়া স্থলবন্দরে এসে পৌঁছায় ট্রেইলারগুলো। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশন ও কাস্টমস'র পক্ষ থেকে একদিন পিছিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার সকালে পণ্য গ্রহণ করার কথা জানানো হয় পরিবহন প্রতিষ্ঠানকে। সে অনুযায়ী সবধরণের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে পণ্যবোঝাই ট্রেইলারগুলো আগরতলায় প্রবেশ করে।
আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী মো. আক্তার হোসেন বলেন, "বাংলাদেশে এবং ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় পরীক্ষামূলক প্রথম চালানের পণ্য আগরতলায় পৌঁছেছে। ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী বন্দরে পণ্যগুলো গ্রহণ করেছেন।"
ম্যাংগো লাইন লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সোহেল খান বলেন, "পণ্যগুলো আগরতলায় পৌঁছাতে পেরে আমরাও আনন্দিত। এর মাধ্যমে দুইদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও উন্নতি হবে বলে মনে করি।"
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রজস্ব কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশীদ জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের চুক্তির আওতায় প্রথম চারটি কন্টেইনার আগরতলায় গেছে। এর জন্য মাশুল এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে প্রসেসিং হয়েছে।
ট্রানজিট চালানের মাধ্যমে দুইদেশের ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে বলে জানিয়েছেন আগরতলা কাস্টমস সুপারিন্টেনডেন্ট জয়দীপ মুখার্জি।
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল পরিবহন করে ভারত সরকার।