বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিডার ১৯ দফা সুপারিশ
বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ানোর জন্য ১৯ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এক প্রতিবেদনে।
প্রতিযোগী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে কম। বিনিয়োগকারীদের অপ্রতুল অবকাঠামো, রেগুলেটরি আনপ্রেডিক্টেবিলিটি, বিদেশে অর্থ প্রেরণ ও দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ বাধা, লভ্যাংশ বিদেশে নেয়ার ক্ষেত্রে জটিলতাসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।
এসব বাধা দূর করে করোনা সৃষ্ট পেক্ষাপটে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিডা গঠিত এক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে ১৯ দফা সুপারিশ করা হয়।
সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরি, বন্দর সুবিধা বাড়ানো, বিলম্ব বিল পরিশোধের দন্ড মওকুফ, কর্পোরেট কর ও সম্পূরক কর কমিয়ে ট্যাক্স হলিডের সীমা বাড়ানো, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য সমনীতি প্রণয়ন, বিদেশি ঋণ গ্রহণের জটিলতা দূর করা, আমদানি রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সহজীকরণে (জিটুবি) সরকারী সেবা প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল করা, ইপিজেডে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি প্রথা বিলুপ্তকরণ, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা সম্প্রসারণ, ঢাকা টোকিওর সরাসরি ফ্লাইট চালু, বিদ্যমান আইনের জটিলতা দূর করা, দীর্ঘমেয়াদী নীতি গ্রহণ প্রভৃতি।
বিজনেস ইনিশিয়াটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান সুপারিশগুলোকে চমৎকার হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, "আমি আশা করছি পরিবর্তনের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সুপারিশগুলি কার্যকর করা হবে। প্রতিবেদনে উল্লেখিত খাতগুলো ছাড়াও কর সংস্কার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেখানে মনোযোগের প্রয়োজন রয়েছে।"
" লুক ইস্ট পলিসিও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আরও গভীর সংশ্লেষ প্রয়োজন, যা অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলিতে বিদেশি বিনিয়োগকে (এফডিআই) আকর্ষণে সহায়ক হবে । মাসিক পর্যালোচনা এবং অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে সরকারী-বেসরকারী খাতে একটি বিনিয়োগকারী দল গঠন করা দরকার।"
এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য চলতি মাসের ১৭ তারিখ বিডা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়। এর একটি কপি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকেও দেয়া হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশ হিসেবে ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে করোনার প্রভাব। এই প্রেক্ষিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্যই এই সুপারিশগুলো করা হয়েছে।
বিডা সূত্রে জানা গেছে, চীন ও যুক্তরাষ্টের বানিজ্য টানাপোড়েন এবং করোনাসৃষ্ট ইস্যুতে চীন থেকে সরে আসা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিডার সদস্য নাভাস চন্দ্র মন্ডলের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।
এই প্রতিবেদন তৈরিতে বিডা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী সংগঠন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বিডা ও ইউএনডিপি যৌথভাবে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কাজ করছে।
প্রতিবেদনে ছয়টি খাতকে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলে- এগ্রো বেইজড ইন্ডাষ্ট্রি, নন লেদার এন্ড ফুট ওয়্যার, জুট গুডস এন্ড হেন্ডিক্যাফটস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, হসপিটাল এন্ড মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট এবং আইটি এন্ড আইটি অ্যানাবল সার্ভিসেস (ই-কমার্স সহ)।
সম্ভাবনাময় বিনিয়োগকারী হিসেবে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চায়না/হংকং, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে টার্গেট করার কথা বলা হয়েছে; আকৃষ্ট করতে ঐসব দেশে রোড শো, মেলা, সেমিনার করা যেতে পারে। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগী হতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এফডিআই এসেছে ২ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার যা প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম।