যে খাতগুলোতে কর ছাড় দিচ্ছে সরকার
মহামারির কারণে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও বিভিন্ন খাতকে এগিয়ে নিতে বাজেটে বেশ কিছু ক্ষেত্রে কর অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ৬,০৩,৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন তিনি।
নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। বাজেটের টাকার এই অংক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৭.৫ শতাংশের সমান।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে যে খাতগুলোতে কর অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন সেগুলো হল-
১. বাংলাদেশের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন
বাংলাদেশের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে বিদ্যমান ২২টি খাতের পাশাপাশি নিম্নোক্ত আরো ৬টি নতুন খাতকে করমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হল- ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিং।
২. মেগা শিল্প উৎপাদনে "Made in Bangladesh"- কে প্রণোদনা
মেগা শিল্পে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে অন্যূন ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে স্থাপিত অটোমোবাইল (থ্রি হুইলার ও ফোর হুইলার) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ২০ বছর কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
৩. হোম আপ্লায়েন্সেস উৎপাদনে "Made in Bangladesh"- কে প্রণোদনা
ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ অভেন, ইলেক্ট্রিক সেলাই মেশিন, ইন্ডাকশন কুকার, কিচেনহুড এবং কিচেন নাইভস্- এ সকল হোম ও কিচেন এপ্লাইয়েন্সেস উৎপাদনে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানকে দশ বছর কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
৪. কৃষিপণ্যের শিল্পায়ন, উদ্যোক্তা তৈরী এবং কর্মসংস্থানে প্রণোদনা
ক) শিল্পায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যে মূল্য সংযোজনে, যেমন- ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ, শাক-সবজি প্রক্রিয়াজাতক, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন, এবং শিশু খাদ্য উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাকে দশ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
খ) কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাকে দশ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
৫. জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে প্রণোদনা
শিল্পায়নের উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরীতে নিম্নোক্ত খাতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানকে দশ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়ছে-
ক) কৃষি, ফিশারিজ, বিজ্ঞান ও আইটি খাতের সকল ধরনের ডিপ্লোমা ডিগ্রি ও ভোকেশনাল শিক্ষা; এবং
খ) অটোমোবাইল, এয়ারক্রাফট সংরক্ষণ, খাদ্য, ফুটওয়ার, গ্লাস, মাইনিং, মেকানিক্যাল, শিপ বিল্ডিং, লেদার, রেফ্রিজারেশন, সিরামিক্স, মেকানিস্ট, গার্মেন্টস্ ডিজাইন এবং প্যাটার্ন মেকিং, ফার্মেসি, নার্সিং, ইন্টিগ্রেটেড মেডিক্যাল, রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং, আল্ট্রাসাউন্ড, ডেন্টাল, এনিম্যাল হেলথ এন্ড প্রডাকশন সার্ভিস, ক্লদিং ও গার্মেন্ট ফিনিসিং, পোল্ট্রি ফার্মিং এর উপর পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদান।
৬. লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং উদ্যোক্তা তৈরী এবং কর্মসংস্থানে প্রণোদনা
হালকা প্রকৌশল শিল্পের সকল প্রকার পণ্য, যা- কেবল শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত হবে এবং পূর্ণাঙ্গ কোনো যন্ত্র নয়, কেবল যন্ত্রাংশ হবে তা উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাদের দশ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
৭. আইটি হার্ডওয়ার খাতে উদ্যোক্তা তৈরী এবং কর্মসংস্থানে প্রণোদনা
আইটি খাতে বাংলাদেশে আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়ার জন্য শিল্প ও উদ্যোক্তা তৈরী এবং কর্মসংস্থানে প্রণোদনা হিসেবে মাদারবোর্ড, ক্যাসিং, ইউপিএস, স্পীকার, সাউন্ড সিস্টেম, পাওয়ার সাপ্লাই, ইউএসবি ক্যাবল, সিসিটিভি এবং পেনড্রাইভ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দশ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
৮. সুলভ এবং বিকেন্দ্রীত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য মানসম্পন্ন চিকিৎসাব্যবস্থাকে সুলভ করতে হাসপাতালের আয়কে দশ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। তবে তা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং চট্টগ্রাম জেলার বাইরে স্থাপিত হতে হবে; এবং অন্যূন ২৫০ শয্যার সাধারণ হাসপাতাল অথবা ২০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল হতে হবে।
৯. নারী উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা
নারী উদ্যোক্তার মালিকানাধীন এসএমই খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভারের পরিমাণ ৭০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের আয়কে করমুক্ত করা হয়েছে।
১০. দীর্ঘ মেয়াদি পুঁজি সংগ্রহে ও বন্ড মার্কেট সৃষ্টিতে সহায়তা
দীর্ঘ মেয়াদি পুঁজি সংগ্রহের লক্ষ্যে সুকুক বন্ডের সহজ প্রচলন ও বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে ট্রাস্ট বা এসপিভির নিকট সম্পত্তি হস্তান্তর এবং ট্রাস্ট বা এসপিভির নিকট হতে মূল প্রতিষ্ঠানের বরাবরে সম্পত্তি পুনঃ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কর হতে অব্যাহতি প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
১১। ক্ষুদ্র ঋণ সংগ্রহে সহায়তা
ক্ষুদ্র ঋণের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিতে এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো এর পাশাপাশি মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি'র সাথে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষুদ্রঋণ হতে আয়কে করমুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
১২. ন্যূনতম করহার যৌক্তিকীকরণ
ব্যক্তি করদাতাদের ব্যবসায়িক টার্নওভার করহার .৫% এর পরিবর্তে .২৫% করার প্রস্তাব করা হয়েছ।