রংপুরে তামাকের বদলে চা!
উত্তরাঞ্চলে এক সময় সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ হতো রংপুর জেলায়। এখন ক্ষতিকর, বিষাক্ত এই তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে চা চাষসহ নানা বিকল্প ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়ছে রংপুরের চাষীরা। উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়ে আগেই চা চাষ হচ্ছে। চা চাষ লাভজনক হওয়ায় রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় মন্টু বর্মন রায় নামের এক চাষি তামাক চাষ বাদ দিয়ে চা বাগান করে সাফল্য অর্জন করেছেন ।
দুই বছর আগেও তার যে জমিতে বিষাক্ত তামাক চাষ হতো, সেই জমিতে এখন চা চাষ করছেন মন্টু বর্মন। রংপুরের সয়ার ভাঙ্গা পাড়া গ্রামের অধিবাসী মন্টু বর্মন গত দুই বছর ধরে চা চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। তিনিই এ জেলায় প্রথম চায়ের উৎপাদন শুরু করলেন। মন্টু বর্মন নিশ্চিত করলেন, চা চাষে খরচ কম। লাভ বেশি। রংপুরে তাই আরো অনেক চাষি তামাক চাষ ছেড়ে চা চাষ করতে অগ্রহী হয়ে উঠেছে।
চা চাষি মন্টু বর্মন জানান, পঞ্চগড় থেকে ৮শ চা চারা এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। ১৫০ শতক জমিতে রোপন করেছেন এ চারা গাছগুলো। তার সব মিলে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। তবে প্রতি বছরের খরচ বাদে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা এই চা বাগান থেকে আয় করেন তিনি এখন।
তিনি আরও বলেন ৪৫ দিন পর পরেই চা বাগান থেকে চা পাতা তুলতে হয়। এর পর তা বিক্রি করেন পঞ্চগড় ও সিলেটের কিছু চা ব্যবসায়ীসহ আরও কিছু কোম্পানির কাছে।
তামাক চাষ ছেড়েছেন তিনি দুই বছর আগে। চা চাষে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়নি তাকে। অল্প পরিশ্রমেই চা আবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন তিনি।
তিনি বলেন, অনেকেই চা চাষের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রতিদিনই তার সঙ্গে পরামর্শ করতে আসছেন ওই এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার সবজি ও তামাক চাষিরা।
চা বাগানে কর্মরত শ্রমিক মোঃ রিয়াদ ইসলাম, তুলসী রানী রায়, পুবিতা রানী রায়ের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতি মাসে ১০০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক এই চা বাগানে কাজ করছেন। এই চা বাগানে কাজ করে পরিবারসহ তার সংসার ভালোই চলছে ।
চা চাষি শ্রী সঞ্জয় বর্মন জানান, তিনি একজন চা শ্রমিক। তার বাবা মন্টু বর্মনের পরামর্শ অনুযায়ী এই চা বাগানে কাজ করে যাচ্ছেন। অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভের আশা করছেন তারা। তবে সরকার উত্তরবঙ্গের এই চা শিল্পের উপর একটু নজর রাখলে তারা চা চাষে আরও ভালো করবেন। তিনি আরও জানান, ঝড় বৃষ্টিতে নষ্ট হয়না চা বাগান। আর তাদের চা এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়।
চা বাগানে কর্মরত নারী শ্রমিক শ্রী সাথী রায় জানান, প্রায় দুই বছর ধরে এই চা বাগানে কাজ করে ছেলে মেয়ের লেখাপড়াসহ সংসার ভালোই চলছে তার। আগে তামাকের জমিতে কাজ করে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এখন চা বাগানে কাজ করে কোন সমস্যা নেই তাদের।
নারী শ্রমিক শ্রীমতি জয়ন্তী রানী রায় জানান, দুই বছর আগে এই জমিতেই তামাকের কাজ করতেন তিনি। তামাক ক্ষেতে কাজ করায় তার পরিবারের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এখন সেই একই জমিতে কাজ করছেন, যা এখন চা বাগান। তার সঙ্গে তার পরিবারের অনেকেই কাজ করছেন। এখন তাদের বাড়িতে অসুস্থ আর কেউ নেই। চা বাগানে কাজ করে সংসার তাদের ভালোই চলছে ।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ডক্টর মোহাম্মদ সরওয়ারুল হক বলছেন, অল্প পরিশ্রমেই চা চাষ করছেন তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ভাঙ্গা গ্রামের চাষী মন্টু বর্মন। বিষাক্ত তামাক আবাদ ছেড়ে চা চাষ করছেন এটি একটা দারুণ দৃষ্টান্ত।
এই চা বাগানটি রংপুর জেলার তারাগঞ্জের এক মাত্র চা বাগান। চা চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই চা বাগান করার জন্য পরার্মশ নিতে আসছেন। কৃষি বিভাগ থেকে যত রকম সহযোগিতা দেয়া দরকার তা দেয়া হচ্ছে এই চাষিকে।