রাজস্ব আদায়ে অর্থবছরের ৬ মাস: করোনাকালেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২.৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/01/14/chittagong_customs_house.jpg)
করোনাভাইরাস সংক্রমণে কন্টেইনার পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দরে ৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি কমলেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২.৪১ ভাগ পজিটিভ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।
বিশ্বব্যাপী সংকটকালীন এই সময়ে দেশের সর্ববৃহৎ শুল্ক স্টেশনে রাজস্ব আদায়ের ধারাবাহিক এই সফলতাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে রাজস্ব আদায় হয় ২১ হাজার ৬৬৪.৪২ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২১ হাজার ১৫৫.২৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে ৫০৯.১৮ কোটি টাকা।
অর্থবছরের শুরুতে মাইনাস ১১.৫৭ শতাংশ ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি হলেও ৬ মাস শেষে রাজস্ব আদায়ের পজিটিভ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২.৪১ ভাগ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বলছে, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি, জালিয়াতিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড আগের তুলনায় কমে আসায় রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া রোধে রাজস্বের কমপক্ষে দ্বিগুণ জরিমানা এবং অনিয়মের ধরন বিবেচনায় চারগুণ পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখায় শুল্ক ফাঁকির প্রবণতা কমে এসেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, 'সৎ ব্যবসায়ীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে টিম কাজ করছে। করোনার সংক্রমণ শুরুতে দেশের প্রায় সব অফিস বন্ধ থাকলেও কাস্টম হাউসের কার্যক্রম বন্ধ থাকেনি। রাজস্ব আদায়ে ধারাবাহিকতা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা আমাদের রয়েছে। ফলে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়। অর্থবছরের শেষ সময় পর্যন্ত এই ধারা বজায় রাখতে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।'
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে মাইনাস ১১.৫৭ শতাংশ ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধির পর আগস্ট মাসে এ পর্যন্ত অর্থবছরের সর্বোচ্চ ১১.৫৫ ভাগ পজিটিভ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। এরপর সেপ্টেম্বরে ১০.৭৪ শতাংশ পজিটিভ প্রবৃদ্ধির পর অক্টেবরে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্বক ১.১১ শতাংশ হয়ে যায়। পুনরায় নভেম্বরে আরও পজিটিভ প্রবৃদ্ধিতে ফেরে কাস্টম হাউস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ৮.৬৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে এসে প্রবৃদ্ধি কমে মাইনাস ০.৭১ শতাংশে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য শেষ হওয়া ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউস (টুয়েন্টি ফিট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট)। ২০১৯ সালে হয়েছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউস।
সদ্যসমাপ্ত বছরে আগের বছরের চেয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার পরিবহন কমেছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২১০ টিইইউস। কনটেইনার পরিবহন কমেছে প্রায় আট শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে শতাংশের হারে কনটেইনার পরিবহন সবচেয়ে বেশি কমেছে ২০২০ সালে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৩৩.৭০ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৬৬৪.৪২ কোটি টাকা। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষমাত্রা ছিল ৫৮ হাজার ২৯৮.০৫ কোটি টাকা। এই লক্ষামাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ৪১ হাজার ৮৫৩.৮৬ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে ৩.৯৬ % ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'করোনার এই সময়ে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত অর্থবছর যেখানে ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পজিটিভ প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। এই ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে।'