রেমিটেন্সের ঢলে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইফলক ছুঁলো রিজার্ভ
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েই চলেছে। ছয় মাসের মাথায় রিজার্ভের স্থিতি ৪০ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করলো। সোমবার রিজার্ভের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৫.১০৫ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
রেমিটেন্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি, করোনায় বেসরকারি বিনিয়োগ না হওয়ায় এ সংক্রান্ত আমদানি ব্যয় হ্রাস পাওয়া এবং বিদেশে ভ্রমণ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয় কমে যাওযায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এর আগে গেল বছরের ৮ অক্টোবর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইল ফলক ছুঁয়েছিল। এরপর চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত সপ্তাহ থেকেই এটি ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই করছিল। রবিবার ৪৪.৯৭ বিলিয়ন ডলার থেকে সোমবার ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেল।
আন্তজার্তিক মানদণ্ডে কোন দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকতে হয়। বাংলাদেশে এখন যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে তা দিয়ে ৮ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব।
রিজার্ভ বাড়াতে অন্যতম ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উচ্চ প্রবাহ। গেল ১ ও ২ মে মাত্র দুই দিনেই রেমিটেন্স এসেছে ১৫৪ মিলিয়ন ডলার। এপ্রিল মাস জুড়ে এসেছে ২.০৬ বিলিয়ন ডলার, যা গেল বছরের এপ্রিলের চাইতে ৮৯ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল এই ১০ মাসে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেড়ে প্রবাসী আয় এসেছে ২০.৬৭ বিলিয়ন ডলার। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়েও প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বেশি।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের (ঢাকা কার্যালয়) সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রেমিটেন্স রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া বাইরে বেড়াতে যাওয়া বন্ধ ও চিকিৎসা নিতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা কমে গেছে, রপ্তানি আয় কিছুটা বেড়েছে এবং আমদানি ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যের সার্বিক ভারসাম্যের উদ্বৃত্তের (ব্যালেন্স অব পেমেন্টে) প্রভাবে রিজার্ভ বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি এই আট মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের সার্বিক ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত (ব্যালেন্স অব পেমেন্টে) ৬.৮৮ বিলিয়ন ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ২১৪ মিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে আমদানি ব্যয় হয়েছে ২.১২ বিলিয়ন ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের ছিল ২.৬০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শিল্পের উৎপাদনে ব্যবহার করা মধ্যবর্তী কাঁচামালের আমদানি ৫ শতাংশ বাড়লেও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ।
জাহিদ হোসেন বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়া বলে দিচ্ছে বিনিয়োগ হচ্ছে না দেশে। কোভিড পরিস্থিতি কেটে গেলে আমদানি ব্যয় যখন বাড়বে তখন রিজার্ভ কমে যাবে। তিনি বলেন, যথেষ্ট পরিমাণ রিজার্ভ অর্থনীতির জন্য স্বস্তির বিষয়। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতায় এটি ভূমিকা রাখে।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কোভিড এর মাঝে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে শক্তিশালী রিজার্ভ থাকায় সামষ্টিক অর্থনীতির (ম্যাক্রো ইকনোমি) স্থিতিশীলতা বজায় আছে।
তবে এই স্থিতিশীলতা শুধুমাত্র বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ক্ষেত্রে সঠিক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগ (সিপিডি) এর ডিস্টিঙ্গুইসড ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, সার্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার বিষয়টি বিনিয়োগ দিয়ে চিন্তা করতে হবে। করোনার ফলে যেহেতু নতুন শিল্পকারখানা হচ্ছে না সুতরাং প্রভাব কর্মসংস্থান থেকে নিয়ে আয় বৃদ্ধি না পাওয়াসহ সব জায়গাতেই পড়বে।
গেল বছরের নভেম্বরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ চলতি বছর ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। রিজার্ভের অর্থ সরকারি প্রকল্পে ব্যবহারের কথাও বলেছিলেন।
তারই আলোকে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি রিজার্ভ থেকে বার্ষিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থ নিয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল গঠন করে সরকার। প্রথম ধাপে এই তহবিল থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।