সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ১.০৭ বিলিয়ন ডলার
সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ ১.০৭ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে, যা বছরে ৮০.২২ শতাংশ বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত মাসে মোট ২.৪০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে, যা গত বছরের একই মাসে ১.৩৩ বিলিয়ন ডলার ছিল।
এছাড়া, সেপ্টেম্বর মাসে রেমিটেন্স গত মাসের তুলনায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে, যা গত তিন মাসে সর্বোচ্চ প্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, নতুন সরকার গঠনের শুরু থেকেই প্রবাসীরা হুন্ডিতে রেমিটেন্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা লাইনে দাঁড়িয়ে হলেও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। যার কারণে দেশের প্রবাসী আয় ব্যাপক পরিমাণে বাড়ছে।
তারা আরও বলেন, রেমিটেন্স বৃদ্ধির ফলে ডলার বাজার স্থিতিশীল হয়েছে এবং ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ডলারের বিনিময় হার টাকায় ১২০ টাকায় স্থির রয়েছে। আগে ব্যাংক এবং কার্ব মার্কেটের মধ্যে ৩ থেকে ৪ টাকার একটি ধারাবাহিক পার্থক্য ছিল। কিন্তু এখন উভয় বাজারের হার একীভূত হয়েছে।
বর্তমানে দেশের বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ১৯.৫৬ বিলিয়ন ডলার।
যমুনা ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মতে, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স বৃদ্ধির একটি মূল কারণ হলো, আনুষ্ঠানিক ও অ্যানুষ্ঠানিক বাজারের মধ্যে হার পার্থক্যের সংকোচন।
তিনি উল্লেখ করেন, নতুন সরকারের উৎসাহে প্রবাসীরা সক্রিয়ভাবে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন, যা ব্যাংকিং চ্যানেলের রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।
ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স হার
কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি হেড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রতি ডলার ১২০ টাকায় কিনছেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম তিন সপ্তাহে এই হার স্থিতিশীল থাকলেও, শেষ সপ্তাহে প্রবাসীরা ১২০.৫ টাকার আশেপাশে রেমিটেন্স দাবি করেছেন।
বর্তমানে ক্রলিং পেগ হার ১২১ টাকা এবং ব্যাংকগুলো লেটার অব ক্রেডিটের জন্য ১২১ টাকা চার্জ করছে। অপরদিকে, রপ্তানিকারকরা রপ্তানি প্রবাহের জন্য প্রতি ডলারে ১১৯ টাকা পাচ্ছেন।
একজন কর্মকর্তা বলেন, "বিদেশী ব্যাংকগুলোর কারণে আমাদের যেসব পেমেন্ট ওভারডিউ রয়েছে, সেগুলো ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। আমাদের ব্যাংকগুলোর ইন্টার ব্যাংক ডলার ট্রানজেকশন নিয়মিত হচ্ছে। যার কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো অন্য ব্যাংকগুলো থেকে ডলার সাপোর্ট নিয়ে তাদের ওভারডিউ পেমেন্টগুলো পরিশোধ করছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অনেক ব্যাংক ডলারের নিট ওপেন পজিশন (এনওপি) পজিটিভ রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণে দায় রয়েছে, তার তুলনায় ডলার প্রবাহ বেশি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "আগামী দু'মাসের মধ্যে বিদেশী ব্যাংকগুলোর ওভারডিউ পেমেন্টগুলো কমে আসবে। এছাড়া, রেমিটেন্সের প্রবাহ আরও বাড়লে ডলার মার্কেট পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থানে চলে আসবে।"
যেসব ব্যাংকে বেশি পরিমাণে রেমিটেন্স আসছে
সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩২২ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে অগ্রণী ব্যাংকে। এরপর রূপালী ব্যাংকে এসেছে ১১৩ মিলিয়ন ডলার।
এছাড়া, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০২ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকে। তারপরেই ২৪৫ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে ট্রাস্ট ব্যাংকে।
এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এই মাসে ১০৯ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমে যায়। আবার সরকারকে অসহযোগিতার জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স না পাঠাতে ব্যাপক প্রচারণা হয়। এসব কারণে রেমিটেন্স কমে যায়।
শেখ হাসিনার পতনের পর, প্রবাসীরা আবারও ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে শুরু করেন। যার ফলে, আগস্ট মাসে রেমিটেন্সের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে।
জুন মাসে প্রবাসীরা মোট ২.৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন, যেটি মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মে মাসে প্রতি ডলারে ৭ টাকা বৃদ্ধি এবং ঈদুল আজহার আগে রেমিটেন্স প্রবাহের বৃদ্ধির কারণে সম্ভব হয়েছে।