লকডাউনের প্রভাবে খাগড়াছড়িতে বাগানেই পচে যাচ্ছে আনারস
কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার আনারস চাষী ও ব্যবসায়ীরা। আনারস বাজারজাত করার মৌসুম এখন, অথচ লকডাউনের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে লাভের পরিবর্তে লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা। বাগানেই পচে যাচ্ছে এখানকার উৎপাদিত আনারস। সীমিত হারে যতটুকু বিক্রি হচ্ছে, সেটিও নিতান্ত পানির দরে৷ মৌসুমী ফল বাজারজাতকরণে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
খাগড়াছড়িতে উৎপাদিত আনারস স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। তবে এই মৌসুমে এর ভিন্ন চিত্র। করোনার প্রভাবে বন্ধ রয়েছে হাটবাজার ও পণ্য পরিবহন। ক্রেতারা বাজারে আসতে না পারায় বিক্রি হচ্ছে না আনারস। এতে চাষীদের পাশাপাশি লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরাও।
খাগড়াছড়ি জেলার সকল উপজেলাতেই কম-বেশী আনারসের আবাদ হয়। এ বছরে জেলায় ১২১৮ হেক্টর পাহাড়ি টিলা ভূমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে৷ চলতি মৌসুমে আনারস উৎপাদন হয়েছে ২৬ হাজার মেট্রিক টনের চেয়েও বেশী। এ বছর আনারসের ফলন হয়েছে বেশী, তবে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আনারসের উৎপাদন আশানুরূপ হয়নি৷ একদিকে উৎপাদন হ্রাস, অন্যদিকে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছরই চাষীদের কাছ থেকে আগাম আনারস ক্রয় করেন ব্যবসায়ীরা, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফলে চাষীদের চেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
লকডাউন ঘোষণার পরপরই আনারসের বাজারে ধস নেমেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ইতিমধ্যে বাজারে আনারসের দাম একেবারেই কমে গেছে। যে আনারস প্রতি পিস বিক্রি হতো ২০ থেকে ৩০ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকায়।
গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া এলাকার আনারস ব্যবসায়ী তোফায়েল হোসেন এই মৌসুমে ২৫ লাখ টাকায় চারটি বাগানের প্রায় ২ লাখ পিস আনারস অগ্রিম কিনেছিলেন। এর মধ্য থেকে মাত্র ১ লাখ পিস আনারস বিক্রি করতে পেরেছেন। লকডাউনের কারণে বাকী আনারসগুলো বাগানেই নষ্ট হচ্ছে। মাঝে মধ্যে সামান্য কিছু বিক্রি হলেও উপযুক্ত দর পাচ্ছেন না।
মানিকছড়ি উপজেলার হাতিমুড়া এলাকার আনারস ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, 'আনারস বাগানের মালিকের কাছ থেকে ৯৬ লাখ টাকার চুক্তিমূল্যে প্রায় ৮ লাখ পিস আনারস ক্রয় করেছিলাম। এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ লাখ পিস আনারস বিক্রি করতে পেরেছি। তাতেও ইতিমধ্যে প্রায় ৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে৷ বর্তমানে বাগানের আনারসগুলোতে পচন ধরেছে। সবমিলিয়ে অন্তত ৪০ লাখ লোকসান হতে পারে এই মৌসুমে।'
গুইমারা উপজেলার আনারস ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন ও জাকির আকন ১৩ লাখ পিস আনারস আগাম কিনেছিলেন। এরা উভয়েই লোকসানে পড়বেন এই মৌসুমে। সবমিলিয়ে পুরো জেলায় আনারস ব্যবসায়ীরা অন্তত ৫০ কোটি টাকার লোকসানে পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
রামগড় উপজেলার ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া বলেন, 'লাভের আশায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আনারস বাগান কিনেছিলাম। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবো?'
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মর্তুজা আলী বলেন, 'এখন ফলের ভরা মৌসুম। পার্বত্য অঞ্চলের বাগানগুলো বর্তমানে মৌসুমী ফলে ভরপুর৷ তবে লকডাউনের কারণে সেসব ফল বাগানেই পচে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চাষী ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানে পড়বেন। ভবিষ্যতে তারা বাগান সৃজন ও ব্যবসায় আগ্রহ হারাবে।'
তবে মৌসুমী ফল বাজারজাতকরণের জন্য অতি শীঘ্রই সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যোগ করেন তিনি।