লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ বিশ্বের প্রধান ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো
উন্নত দেশের জনগণের হাল ফ্যাশনের চাহিদা পূরণ করছে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ভারত ও চীনের মতো পোশাক শিল্পের কর্মীরা। কিন্তু, এসব দেশ থেকে অধিকাংশ ক্রেতা ব্র্যান্ড সস্তা শ্রমের বিনিময়ে কম মূল্যের সুবিধা নিলেও শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিশেষ করে, এ শিল্পে লিঙ্গ-বৈষম্য মোকাবিলায় সবার ভূমিকা সন্তোষজনক নয়।
তবে কিছু ব্র্যান্ড এদিক থেকে ব্যতিক্রম। যেমন অ্যাডিডাস ও গ্যাপ তুলনামূলক সফলভাবে লিঙ্গ-বৈষম্য মোকাবিলা করছে। নারী শ্রমিকদের গৃহস্থালি থেকে কারখানা পর্যায় পর্যন্ত সম-অধিকার নিশ্চিতে বাদবাকি ব্র্যান্ডের ব্যর্থতার চিত্রই উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত এক বৈশ্বিক সূচকে।
ব্যবসায়ের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে কর্ম পরিবেশের নানান সুযোগ-সুবিধা পরিমাপ করে ওয়ার্ল্ড বেঞ্চমার্কিং অ্যালায়েন্স (ডব্লিউবিএ) । সংস্থাটির সাম্প্রতিক লিঙ্গ সূচক অনুসারে, লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নকে এখনও প্রকাশ্য নীতি হিসেবে ঘোষণা করেনি অ্যাপারেল শিল্পের ৩৫টি প্রধান ব্রান্ডের দুই-তৃতীয়াংশ। সে তুলনায় মাত্র ১৪টি ব্র্যান্ড লিঙ্গ ভিত্তিক নীতি বাস্তবায়ন করছে।
সূচকটি তৈরিতে মজুরির প্রভেদ, শ্রমিক নেতৃত্বে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণসহ নারীর ওপর সহিংসতা ও নিগ্রহ বন্ধের মতো বিভিন্ন রকম নীতিকে বিবেচনা করা হয়। ওই অনুসারে ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো মোট ১০০ পয়েন্টের ভেতর গড়ে ২৯ পয়েন্ট করে পেয়েছে। ডব্লিউবিএ এই পরিস্থিতিকে 'উদ্বেগজনক' বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তবে সূচকে ৫০ পয়েন্ট লাভ করে শীর্ষ অবস্থান লাভ করেছে অ্যাডিডাস, গ্যাপ ও ভিএফ কর্প। একমাত্র এ তিনটি ব্র্যান্ডই এতো বেশি পয়েন্ট পেয়েছে।
অলাভজনক সংস্থা ডব্লিউবিএ'র এনগেজমেন্ট ডিরেক্টর পাওলিনা মার্ফি বলেন, "নারী অধিকার নিয়ে পোশাক শিল্পের সেরা ব্র্যান্ডগুলো অনেক বড় বড় দাবি করে থাকে। কিন্তু, মজুরি, নেতৃত্বে লিঙ্গ অনুযায়ী সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ এবং সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আমরা তাদের কথার সঙ্গে কাজের সঙ্গতি দেখতে পাচ্ছি না। শুধু বুলি আওড়ানোর এই চর্চা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।"
বৈশ্বিকভাবে পোশাক শিল্পে যুক্ত আছেন প্রায় ৬ কোটির বেশি শ্রমিক, যাদের অধিকাংশই হলেন নারী। একইসঙ্গে, এ শিল্পে শ্রম শোষণ ও যৌন নিগ্রহের শিকার নারীদের দুর্দশার চিত্র প্রায়ই সামনে আসে।
অধিকার কর্মীদের অভিযোগ ব্র্যান্ডগুলোর পক্ষ থেকে সরবরাহক কারখানা পর্যায়ে দ্রুত ও কম দামে পোশাক সরবরাহের চাপ থাকার ফলেই শ্রম শোষণের ঘটনাগুলো ঘটছে। করোনাভাইরাস মহামারি এ দুর্দশাকে আরও গভীর ক্ষতে রূপ দিয়েছে বিশ্বব্যাপী।
লিঙ্গ সূচক গবেষণায় সরকারি তথ্য এবং কোম্পানি পর্যায়ের গোপনীয় তথ্য বিশ্লেষণ করে ডব্লিউবিএ'। এর প্রেক্ষিতে সংস্থাটি জানায়, ফ্যাশন শিল্পে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতে ক্রেতা ব্র্যান্ডগুলোর দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং তাদের বাস্তব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়েছে।
শ্রম অধিকার গোষ্ঠী 'লেবার বিহাইন্ড দ্য লেভেল'র নীতি-পরিচালক ডমিনিক মুল্যার লিঙ্গসূচকটির ফলাফলটি নিয়ে বিস্মিত নন। তিনি জানান, সরবরাহ চক্রে ধারবাহিকভাবেই লিঙ্গ বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধে সক্রিয় ছিল না প্রধান ব্র্যান্ডগুলো। যেকারণে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
মুল্যার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, "মহামারির কারণে গার্মেন্টস শিল্পে শ্রম পরিবেশ উন্নয়নের কার্যক্রম গতি হারায়, এর মাধ্যমে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর স্বপ্রণোদিত ও অপর্যাপ্ত প্রতিশ্রুতির দিকটিই সকলের সামনে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।"
সাম্প্রতিক সূচকে সবচেয়ে কম স্কোর পাওয়া কোম্পানির মধ্যে রয়েছে আরবান আউটফিটার্সের মতো ব্র্যান্ড। আরও আছে জি-স্টার র' ব্র্যান্ডের মালিক দ্য ফসচিনি গ্রুপ এবং চীনের পোশাক শিল্পের জায়ান্ট ঝেঝিইয়াং সেমির গার্মেন্ট।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের সঙ্গেসঙ্গে নতুন গবেষণার ফলাফল নিয়ে রিটেইলার ব্র্যান্ডগুলো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
- সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট