সকল খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত ‘নতুন বাংলাদেশ’
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আগামী ২৮-২৯ নভেম্বর দেশে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সামিট আয়োজন করছে বাংলাদেশ সরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীরা এ সম্মেলনে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বৃহৎ এ ইনভেস্টমেন্ট সামিট নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান।সাক্ষাতকার নিয়েছেন টিবিএস রিপোর্টার আব্বাস উদ্দিন নয়ন।
এ সামিটের উদ্দেশ্য
আমাদের বাংলাদেশ এখন নতুন বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর জিডিপি ছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলার, এখন তা ৩৫০ বিলিয়ন ডলার। ওই সময় মাথাপিছু আয় ছিল ৫০০ ডলার, এখন ২৫০০ ডলার। অর্থাৎ পাঁচগুণ বেড়েছে। আমরা এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। এই পরিসংখ্যান বলে দেয় আমরা কত এগিয়েছি। বিদ্যুতে উদ্বৃত্ত, গ্যাস সংকট দূর করা, ভোক্তা শ্রেণী ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিনিয়োগের সব প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছি। 'নতুন বাংলাদেশে' প্রবেশ করেছি, এটিই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জানানোর উদ্দেশ্যে আমাদের ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট।
মূলত, দুটি দুটো উদ্দেশ্য নিয়ে সামিট আয়োজন করা হয়েছে। প্রথমত, নতুন বাংলাদেশকে তুলে করা। দ্বিতীয়ত, বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা। এক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বুঝানো এবং বিনিয়োগকারীদের কী ধরণের সুবিধা দিচ্ছি তা বোঝানো। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে তা বোঝানোর জন্যই এবারের ইনভেস্টমেন্ট সামিট।
আসন্ন সামিটটি আমাদের প্রাইভেট বিনিয়োগ বুস্ট করার একটি অংশ।
নতুন বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে প্রাইভেট খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আমরা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে রোড শো করেছি। বাংলাদেশে এই সামিটটি করে আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বুঝাতে চাই যে, আমরা এখন সব খাতে বিনিয়োগ নিতে সক্ষম।
আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পৌঁছানো। এর জন্য প্রাইভেট সেক্টরই কি (চাবি)। তখন মাথাপিছু আয় ১২০০০ ডলার হতে হবে৷ বর্তমান আড়াই হাজার ডলার থেকে এ অবস্থানে যেতে প্রাইভেট বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। প্রাইভেট খাতের বিনিয়োগ আমাদের বর্তমান অবস্থার চেয়ে ৭০ শতাংশ বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যেই আমাদের এ আন্তর্জাতিক ইনভেস্টমেন্ট সামিট।
কাদের জন্য এই সামিট
ইনভেস্টমেন্ট সামিটে কারা অংশ নেবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, "মূলত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা এই সামিট আয়োজন করেছি। এজন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেছি। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে বড় বড় বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছি। যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান এরইমধ্যে আমাদের দেশে বিনিয়োগ করেছে এবং আগ্রহ দেখিয়েছেন তাদের পাশাপাশি নতুনদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। একইসঙ্গে আমাদের স্থানীয় বিনিয়োগকারীদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা এখানে এসে বিনিয়োগের জন্য একটা গাইডলাইন পাবেন। বিনিয়োগকারীদের জন্য কী কী সুবিধা আমরা তৈরি করেছি তা তারা জানবেন।
বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কী কী সুবিধা থাকছে
একজন বিনিয়োগকারী বিদ্যুৎ, গ্যাস, অবকাঠামো, জমি ও বন্দর চায়। সবগুলো বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করেছি। আমাদের বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত, এলপিজি আসার পর গ্যাস সংকট কেটে গেছে। জমির জন্য ১০০টা স্পেশাল ইকোনমিক জোন করেছি। ইনফ্রাস্ট্রাকচার হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে। পায়রা বন্দর করেছি, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হচ্ছে।
বিনিয়োগের জন্য ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বাইরে আরেকটা বিষয় চায় বিদেশিরা। সেটা হলো- পণ্য উৎপাদনের পর তা বিক্রি করে রিটার্ন পাওয়া। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বাংলাদেশে বিশাল ভোক্তা শ্রেণী তৈরি হয়েছে। চীন ও ভারতের খুব কাছে হওয়ায় এই দুই বাজারে আমাদের পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগ করে ওই দেশে রপ্তানি করতে পারবে। এসব বিষয়গুলো বিদেশিদের জানানোর চেষ্টা করছি।
অবকাঠামো ছাড়া বিনিয়োগকারীরা আর কী কী সুবিধা পাচ্ছেন
অবকাঠামো এবং বাজার ছাড়াও আমরা করের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছি। ১০-২০ বছর পর্যন্ত ট্যাক্স হলিডে দেয়া হয়েছে। শুল্কমুক্তভাবে পণ্য আমদানি ও ভ্যাটে ছাড় দেয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার করা হয়েছে। এক জায়গায় আসলেই বিনিয়োগের সব সুবিধা পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। বিনিয়োগের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করেছি। আমাদের এই প্রস্তুতিগুলোই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জানাতে চাই।
অনেক বিনিয়োগকারীর অভিযোগ, দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নেই। এ ব্যাপারে সরকার কী করছে?
আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আমরা জিডিপি থেকে বেসরকারি বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রায় পিছিয়ে আছি। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের এ বিশ্বাস।
তারা অনুকূল পরিবেশ চেয়েছে। আমরা এরই মধ্যে তা দিয়েছি।
আমাদের প্রস্তুতির ফলে বিনিয়োগের জন্য ইতিমধ্যেই বিপুল সাড়া পেয়েছি। স্যামসাং, হুন্দাই, হোন্ডা, নকিয়াসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে। ইউনিলিভার, বার্জারসহ বড় বড় কোম্পানিগুলো বহু বছর ধরে ব্যবসা করছে। তারা ব্যবসা সম্প্রসারণেও যাচ্ছে। ইকোনমিক জোনগুলোতে বিদেশিরা আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি জমি চেয়েছে। অনেক ইকোনমিক জোনে জায়গা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এটি আমাদের নতুন সম্ভাবনার প্রমাণ দিচ্ছে। এ বিষয়গুলো জানানোর জন্যই ইনভেস্টমেন্ট সামিটকে বড় সুযোগ হিসেবে দেখছি আমরা।