১০ মাসে নিট বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৩২ শতাংশ
করোনার মাঝেও নিট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে এই বিনিয়োগর পরিমাণ গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২.১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৪৬ বিলিয়ন ডলার।
বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো লভ্যাংশ বাবদ যে অর্থ নিয়ে যায়, মোট বিদেশি বিনিয়োগ থেকে তা বাদ দিলে নিট বিনিয়োগ পাওয়া যায়। জুলাই-এপ্রিল সময়ে মোট (গ্রস) বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২.৯৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৮৫ শতাংশ বেশি।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (বিওপি) সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নিট বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাংলাদেশের বার্ষিক বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। দুই-একটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ বাড়ালেই পরিমাণ বেড়ে যায়।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, জাপান ট্যোবাকো যখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছিল তখন বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বেশি দেখা গেছে। জুলাই-এপ্রিল সময়ের বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেলে বুঝা যাবে আসলে সার্বিকভাবে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে নাকি দুই একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের প্রভাব পড়েছে।
এই অর্থনীতিবিদ জানান, মিয়ানমারে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে ৫ গুণ বেশি। দেশটিতে সামারিক শাসন শুরু হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে দেশটি থেকে কিছু বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে এসে থাকতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৯ শতাংশ বেড়ে ১৯৩ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।
তবে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বাড়েনি। উল্টো শেয়ার বিক্রি করে ২২০ মিলিয়ন ডলার উঠিয়ে নিয়ে গেছেন বিদেশিরা।
এদিকে, জুলাই-এপ্রিল সময়ে আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এর প্রভাবে বাণিজ্যি ঘাটতির পরিমাণ গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ বিলিয়ন ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭.২২ বিলিয়ন ডলারে।
যার প্রভাবে জুলাই-মার্চ সময়ে উদ্বৃত্ত থাকা কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্স জুলাই-এপ্রিলে এসে ৪৭ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যদিও গেল অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্সের এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩.৭৭ বিলিয়ন ডলার।
জুলাই-এপ্রিল সময়ের আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চাল আমদানিতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় বেড়েছে। এরপরই আছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, মরিচ, সয়াবিন, ডাল, ওষুধ তৈরি উপকরণ, রাসায়নিক ক্লিংকার ইত্যাদি আমদানির ব্যয়।
তবে বিনিয়োগের অন্যতম বড় অনুষঙ্গ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যয় জুলাই-এপ্রিল সময়ে বাড়েনি। উল্টো গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এই ব্যয় ৭ শতাংশের বেশি কমেছে।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনা মোকাবেলা করে আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণে আমদানি বাড়ছে বিষয়টি তা নয়। বরং বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।
তিনি জানান, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ও সয়াবিনের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। যার প্রভাবে আমদানির ব্যয়ও বেশি দেখাচ্ছে।