২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে ০.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে: জাতিসংঘ
২০২০ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে ০.৫ শতাংশে এসে ঠেকেছে, ২০১৯ সালেও এ হার ছিল ৮.৪ শতাংশ। জাতিসংঘের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
"এ অঞ্চলের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে, ২০১৯ সালের প্রবৃদ্ধির হার ৮.৪ শতাংশ ছিল, যা ২০২০ সালে ০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি ফিরে আসায় এ ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া গেছে।" বলা হয় প্রতিবেদনটিতে।
গত ২৫ জানুয়ারি জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স (ইউএনডিইএসএ) 'ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সিচুয়েশন অ্যান্ড প্রসপেক্টস ২০২১' শীর্ষক এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনটিতে অর্থবছরের হিসেবেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার তুলে ধরা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে ৪.৩ শতাংশে দাঁড়াবে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৫.১ শতাংশ ও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৭.৬ শতাংশ হবে এমন পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছে।
এ পূর্বাভাস ছাড়াও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবছরের ১ জুন- আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থবছরের হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ঘোষণা করেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫.২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পূর্বাভাস ছিল ২ শতাংশ ও ৩.৮ শতাংশ। এডিবি ও ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সরকারের পূর্বাভাসের সাথেই একমত পোষণ করেছে।
প্রবৃদ্ধির হারের এসব হিসাব ২০১৯ সালের ১ জুলাই- ২০২০ সালের ৩০ জুন সময়ের মধ্যে হিসাব করা হয়েছে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি চালু ছিল, তবে পরবর্তী সময়ে মহামারির আঘাতে বিপর্যস্ত হয়েছে অর্থনীতির সব খাতই।
২০২০ সালের জানুয়ারি- ডিসেম্বর সময়ের বার্ষিক হিসাবের ভিত্তিতে এবং অর্থবছরের ভিত্তিতেও প্রবৃদ্ধির হার প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, গত বছরের মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন পর্যন্ত দেশের সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দেশের এক-তৃতীয়াংশ অর্থনৈতিক কার্যক্রমও যদি মাত্র এক মাসের জন্যও বন্ধ থাকে, তাহলে সেবছর প্রবৃদ্ধি হবেনা। ০.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অনেক কম মনে হলেও, এটি একদমই অবাস্তব নয়।
বিভিন্ন খাতের কার্যক্রম এখনও সীমিত পরিসরে চলছে। রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধিও সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থায় গত বছর এরচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি আশা করার কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
ড. জাহিদ আরও বলেন, ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর মোট উৎপাদন কম হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ৯.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
কোভিড-১৯ এর প্রভাবকে বিবেচনায় না নিয়েই গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হার ৫.২৪ হবে এমন পূর্বাভাস দিয়েছিল সরকার। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হওয়ার পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এখনো সঠিক হিসাব প্রকাশ করেনি। প্রবৃদ্ধির সঠিক হিসাব প্রকাশিত না হওয়ায় এ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ড. জাহিদ হোসেন। ইউএনইএসডিএ'র প্রতিবেদনের ব্যাপারে তিনি বলেন, সংস্থাটি গবেষণা পদ্ধতি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস অনুযায়ী ছিল না। কোনো খাতে কী ধরনের প্রবৃদ্ধি হতে সেব্যাপারে বলা হয়নি এ প্রতিবেদনে। এসব বিষয়ের বিবেচনায় প্রতিবেদনটি কিছুটা দুর্বল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, মহামারির লকডাউনের কারণে দুই মাসের বেশি ধরে উৎপাদন বন্ধ ছিল। লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার পর অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুয়নরায় শুরু হলেও অল্প কিছু খাত ছাড়া কোনো খাতই পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি।
বেসরকারি ঋণ, বিনিয়োগ, উৎপাদন, রপ্তানি, মূলধনের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের মতো অর্থনৈতিক সূচকের পতনের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। মহামারির আঘাতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন সবাই।
এ বিভ্রান্তি দূর করতে শীঘ্রই গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির আসল চিত্র প্রকাশ করার পরামর্শ দেন ফাহমিদা খাতুন।