চামড়া খাতে খেলাপি ১,৫৪১ কোটি টাকা
নিয়মমতো ঋণ পরিশোধ না করায় চামড়া খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৪১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যা চামড়া খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
গত ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এই খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৮৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া খাতে ব্যবসা মন্দা থাকার কারণে নিয়মমতো ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। তাই এ খাতের ঋণ বিতরণের বড় একটি অংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া চামড়া কেনার ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকগুলো অনেক সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এসব কারণে এ খাতে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে আগ্রহ হারাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০২২ সালের মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের অংক দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৭০ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে মার্চ শেষে খেলাপি দাঁড়িয়েছে ১২৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ছিল ৮৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
এছাড়া ২০২২ সালের মার্চ শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর এ খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের অংক ছিল ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
সূত্র আরও জানায়, ২০২২ সালের মার্চ শেষে চামড়া খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ২৬৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর ৭ হাজার ১২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৪ হাজার ৯৫৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর ১৮২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
এদিকে গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির চামড়ার চাহিদা কমে গেছে। তবে এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। তাই ট্যানারি শিল্প উদ্যোক্তারা ঋণ পেতে সরকারের সহায়তা চাচ্ছে।
আসন্ন ঈদুল আযহায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক মিলে ৪৩৩ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চার ব্যাংক ২৫৮ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জনতা ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা প্রস্তুত রেখেছে। গত বছর একই পরিমাণ প্রস্তুত রাখলেও শেষ পর্যন্ত বিতরণ হয় মাত্র ৪০ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক এবার ৩০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। অগ্রণী ব্যাংক দেবে ৮৩ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক এবার ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। মূলত এই চারটি ব্যাংকই চামড়া কেনায় ঋণ দেয়। এর বাইরে বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংক ঋণ দিলেও তার পরিমাণ খুবই কম। মূলত ১৯৯০ এর দশকে বিতরণ করা চামড়ার ঋণের বেশিরভাগই ফেরত না আসায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ খাতে আগ্রহ হারিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২০ সালে ঈদুল আযহার আগে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকসহ ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এ খাতে বরাদ্দ রেখেছিল ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা; কিন্তু এর বিপরীতে ব্যবসায়ীরা ঋণ পেয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৫৮৩ কোটি টাকা; কিন্তু অর্ধেকেরও কম ঋণ বিতরণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে আগের দেওয়া ঋণ খেলাপি হলে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে দিয়ে পুনঃতফসিল করা যাবে।