গত অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৪%, ঘাটতি ৩০ হাজার কোটি
২০২১-২২ অর্থবছরে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং শুল্ক থেকে ৩ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
রাজস্ব আদায় প্রায় ১৪% শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা ৩০ হাজার কোটি টাকা কম বলে জানিয়েছে এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্র।
২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআর আদায় করেছিলো ২,৬৩,৮৮৬ কোটি টাকা।
তবে, এনবিআরের কর্মকর্তারা অর্থনীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় এই আদায়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
আগের অর্থবছরের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রা থাকা, অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি না আসা এবং বছরের শেষ দিকে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কারনে আমদানি কিছুটা কমেছে, যা সার্বিকভাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার কারণ বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের নেওয়া ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির গতি প্রকৃতি বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা বাস্তবে সম্ভব হবে না।
এনবিআরের তিন লাখ কোটি টাকার মাইলফলক স্পর্শ করতে পারাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমাদের ধারণা ছিলো ঘাটতির পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে। সে বিবেচনায় এনবিআর ভালো করেছে।"
তবে সক্ষমতার ঘাটতির কারনে এনবিআর আদায়যোগ্য রাজস্বের অর্ধেকও আদায় করতে পারছে না বলে মনে করেন তিনি।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, গত অর্থবছরের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় প্রবৃদ্ধির হার খারাপ নয়।
তবে তিনি মনে করেন, অর্থনীতির আকার অনুযায়ী যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হওয়া উচিত, তা এনবিআর আদায় করতে পারছে না।
"বিপুল সংখ্যক করযোগ্য ব্যক্তি করের আওতার বাইরে থাকায় যারা নিয়মিত কর দিচ্ছে, তাদের উপর আরো চাপ বাড়ছে", বলেন তিনি।
গত অর্থবছরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা যে অর্জন হবে না, তা অর্থনীতিবিদরা ইতিমধ্যে আভাসও দিয়েছেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩০ হাজার কোটি টাকার মত রাজস্বের ঘাটতি হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন।
আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং শুল্ক – মূলত এই তিনটি খাতের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে থাকে এনবিআর।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাজস্ব আদায়ে আয়কর ও শুল্ক আদায়ে ১৬ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি থাকলেও মূল্য সংযোজন কর খাতে প্রবৃদ্ধি খুবই কম।
অন্যদিকে, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে কাস্টমস ডিউটি আদায়ে বছরের প্রথম ৯ মাস প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২০ শতাংশের মতো।
তবে ডলার সংকট ঠেকাতে সরকার আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নেয়। এর ফলে শেষ তিন মাসে আমদানি কমায় কাস্টমস ডিউটি আদায়ে প্রবৃদ্ধিতে টান পড়ে। তা সত্ত্বেও,
বছর শেষে তা ১৬ শতাংশের মত রয়েছে।
এছাড়া আয়কর আদায়ে তুলনামূলত সন্তোষজনক হলেও, এনবিআরের ট্যাক্স আয়কারী ৩০টি কর অঞ্চলের মধ্যে অন্তত ১৯টি কর অঞ্চল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।