শেষ ৩ মাসে তাড়াহুড়োয় ব্যয় করায় এডিপি বাস্তবায়ন ৯৩%
শেষ দিকে অর্থ ব্যয় বাড়ায় গত অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৯৩% অর্থ ব্যয় করছে পেরেছে সরকার।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সর্বশেষ তথ্য বলছে, এ সময়ে সংশোধিত এডিপি বরাদ্দ থেকে ২০৩৭৬৫ কোটি টাকা অর্থ ব্যয়ের ফলে এডিপি বাস্তবায়ন প্রাক-মহামারি পর্যায়ে ফিরে এসেছে।
এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৪.৬৬ শতাংশ। করোনা মহামারির মধ্যে ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮০.৩৯ ও ৮২.১১ শতাংশে নেমে আসে এ হার।
আইএমইডি সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, "এডিপি বাস্তবায়নে সক্ষমতা বেড়েছে। এ কারণে এডিপি বাস্তবায়নে কোভিড পূর্ব সময়ে যে হারে এডিপি বাস্তবায়ন হতো, এবার একই হারে এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে। আগামীতে এ হার আরও বাড়বে।"
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, অন্যান্য অর্থবছরের মতো সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরেও অর্ধেকেরও বেশি অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে শেষ তিন মাসে। অর্থবছরের শেষ তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ১০৪৮৩০ কোটি টাকা।
তবে আইএমইডির এ প্রতিবেদন প্রকাশ শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী অর্থবছরের শেষে দিকে অর্থ ব্যয় হওয়াকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, অর্থবছরের শুরুতে প্রস্তুতিমূলক কাজ করা হয়, এ কারণে প্রকল্পে অর্থ ব্যয় কম হয়। এবং শেষে দিকে কাজের গতি থাকে বলে, সে সময় বেশি অর্থ ব্যয় হয়।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থবছরে বরাদ্দের অর্থ ব্যয় করতে না পারলে ফেরত চলে যায়, এ বিবেচনায় ঠিকাদারদের বিলের অর্থ অগ্রীম দেওয়া হয়। এ পদ্ধিতে এডিপি বাস্তবায়ন হার বেশি দেখানো হয়।
তিনি বলেন, দেশে অর্থবছরের বরাদ্দের অর্থ পরে অর্থবছরে রোলওভারের সুযোগ না থাকার কারণে ঠিকদারদের অগ্রিম অর্থ দেওয়া হয়। ব্যয়ের চাপ কাজের মানে যেন আপোস না হয় তা নিশ্চিত করতে পরের অর্থবছরে অব্যবহৃত বরাদ্দ রোল ওভার করার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, প্রকল্পের নিম্ন মানের বাস্তবায়নের জন্য তাড়াহুড়ো করে ব্যয়কে দায়ী করেন।
"শেষ দুই বা তিন মাসে তড়িঘড়ি করে অর্থ ব্যয় করা হয় বলে মানসম্মত প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এতে সরকারি অর্থের অপচয় হয়।"
এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সব চেয়ে কম অর্থব্যয় করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৭৬.২১%, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৭০.৫৯% অর্থ ব্যয় করেছে। আর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বরাদ্দ ৭৯% অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগ ৯২%, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৯৯% বিদ্যুৎ বিভাগ ১০১.৯%, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৯১%, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৯১.২৮%, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৯৬%, গৃহায়ন ও পণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৯৯.৫৭%, সেতু বিভাগ ৯৮%, বেসসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৯৫.৩৫%, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ৯৬.৫৯%, শিল্প মন্ত্রণালয় ১১২.২৩% এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ৮৯.৪৪% অর্থ ব্যয় করেছে।