মুদ্রা বিনিময়ের কথা ভাবছে ডি-৮ দেশসমূহ
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতিতে ডলারের ওপর চাপ কমাতে উন্নয়নশীল আটটি দেশ নিয়ে গঠিত ডি-৮ (ডি-৮ অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন) দেশগুলোর মধ্যে ক্রস কারেন্সি সোয়াপ বা মুদ্রা বিনিময়ের করার কথা ভাবছে ডি-৮ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডি-৮ সিসিআই)।
ডি-৮ সিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, 'কারেন্সি ডিভ্যালুয়েশন বা ভোলাটিলিটি অ্যাড্রেস করার জন্য অলটারনেটিভ ট্রেড ফাইন্যান্সিং করা যায়। এ জন্য ডি-৮ দেশগুলোর মধ্যে বার্টার (পণ্যের বিনিময়ে পণ্য) এবং ক্রস কারেন্সি সোয়াপ একটি উপায় হতে পারে। ইন্দোনেশিয়া ইতোমধ্যে তিনটি দেশের সঙ্গে এটি করেছে'।
এছাড়া ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) করার আলোচনা চলছে এবং এর ধারাবাহিকতায় যদি ডি-৮ সিইসিএ (ডি-৮ কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট)- এর পদক্ষেপও নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, দেশগুলোর মধ্যে ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার কমানোর মাধ্যমে বিদ্যমান ট্রেড কয়েক গুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
আগামী মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ঢাকায় ডি-৮ সিসিআই-এর উদ্যোগে বিজনেস ফোরাম অ্যান্ড এক্সপো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে রোববার রাজধানীর বনানীতে ডি-৮ সিসিসিআই কার্যালয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন শেখ ফজলে ফাহিম, যিনি এর আগে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসএআই)-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ক্রস কারেন্সি সোয়াপ বলতে দুই পক্ষের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মুদ্রায় সুদ ও আসল পরিশোধের পরিবর্তে অন্য একটি মুদ্রায় সুদ ও আসল পরিশোধ করা বোঝায়। সুদ পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই তা বিনিময় করা হয়ে থাকে। তাছাড়া লেনদেনের শুরুতে আসল অন্য মুদ্রায় বিনিময় করা হবে কি না, তা দুই পক্ষ আগে থেকেই ঠিক করে নেয়।
১৯৯৭ সালে ডি-৮ প্রতিষ্ঠা হয় এবং চলতি বছর এর সিলভার জুবিলি উদযাপন হবে। বর্তমানে ডি-৮-এর চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ছাড়াও ডি-৮ ভুক্ত সাতটি দেশ হলো মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং তুরস্ক। দেশগুলোর শীর্ষ ব্যবসায়ী চেম্বারের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডি-৮ সিসিআই।
শেখ ফজলে করিম বলেন, পণ্যের ভ্যালু চেইনে ইন্টিগ্রেশন ও সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে এবারের ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য আয়োজনে প্রযুক্তি সম্পর্কিত সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
তিনি বলেন, পিটিএ নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে কথা হয়েছে। এখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা চলছে।
জ্বালানি সম্পর্কিত বাণিজ্য জোরদারের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ পেলে বাংলাদেশ নাইজেরিয়া থেকেও জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারে। আমাদের কাজ হবে কোনো নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার (এনটিবি) যাতে না আসে, সেদিকটা দেখা।
ডি-৮ সিসিআই'র সেক্রেটারি জেনারেল আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, গ্রাউন্ড লেভেলে কাজ করা আমাদের কাজ হবে।
ফজলে ফাহিম বলেন, বর্তমানে ডি-৮ভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতির আকার প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। আর দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৬০ থেকে ৭০ বিলিয়ন ডলার। তবে সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হলে এ বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।