ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা সরকারের
ডি-৮ জোটভুক্ত দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির বিষয়ে কাজ করছে সরকার। ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মধ্যে এ বিষয়ে চিঠি বিনিময় হয়েছে।
বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং তুরস্কের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য ডি-৮ অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন গঠিত হয়। যা ডেভেলপিং-৮ বা ডি-৮ নামেও পরিচিত।
জানা গেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর বেজা ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিতে আইনগত দিক পর্যালোচনা করছে। বেজা বলছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্য থেকে কোনো একটিকে ডি-৮ এর জন্য বাছাই করা যেতে পারে। এছাড়া বেজা গভর্নিং বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে নতুনভাবে জমি অধিগ্রহন করেও প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
গত বছর জুলাইয়ে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জায়গা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সংস্থাটির সদস্য রাষ্ট্রের মন্ত্রীদের ২০ তম সম্মেলনে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করে এই প্রস্তাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য জায়গা দিতে প্রস্তুত। যেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলো বিনিয়োগ করতে পারবে।'
তিনি বলেন, 'যদি এখনই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে আগামী দশকেই শক্তিশালী ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে।'
এর পরই সদস্য রাষ্ট্রের আগ্রহের প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বেজাকে চিঠি দেয়।
তবে বেজা কিছু বিষয় জানতে চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। এতে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির বিষয় যোগাযোগের করার জন্য ডি-৮ সচিবালয়ের পক্ষে একজন ফোকাল পয়েন্ট মনোনয়নের কথাও উল্লেখ আছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, `পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের চিঠি দিয়েছিল। আমরাও কিছু বিষয় জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছি তাদের। যেমন ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্পন্সর হবে কোন দেশ। এটি কি ডি-৮ সদর দপ্তর ইস্তাম্বুল থেকে পরিচালিত হবে, বেজার হাতে থাকবে নাকি সদস্যভুক্ত কোন দেশ নেতৃত্ব দেবে সে বিষয়ে আমরা জানতে চেয়েছি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থা শাখার মহাপরিচালক ওয়াহিদা আহমেদ টিবিএসকে বলেন, ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির বিষয় এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আমরা এ বিষয় কাজ করছি।
গত বছর ২৬-২৭ জুলাই বাংলাদেশে ডি-৮ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডি-৮ সিসিআই) ও এক্সপো ২০২২ আয়োজিত হয়।
তখন অনুষ্ঠানে ইরান চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রিজ, মাইনস অ্যান্ড এগ্রিকালচার এর প্রেসিডেন্ট গোলাম হোসেন শাফেই বলেন, ডি-৮ চেম্বার অব কমার্স এবং প্রত্যেকের প্রতিনিধিত্বকারী বেসরকারি খাত সক্রিয় করার একমাত্র কার্যকর পদ্ধতি হল সাপ্লাই চেইন বাড়ানো, সদস্য দেশগুলিতে যৌথ বিনিয়োগ, যৌথ উৎপাদন এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে পণ্যের মান বাড়ানো।
গত বছর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মোট জিডিপি বিশ্ব জিডিপির প্রায় ৪.৯% এবং মোট জনসংখ্যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ১৫.৩%। ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ১২৯ বিলিয়ন ডলার। দেশগুলোর সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে এ বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ আছে।
বেজা ২০৪১ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। লক্ষ্য হল এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি থেকে বার্ষিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বর্তমানে ৯৭ টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের নীতিগত অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ২৯ টি প্রাইভেট অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৬৮ টি সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল (৪টি গভমেন্ট টু গভমেন্ট (জি২জি) এবং দুটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ)।