তেলাপিয়া, পাঙ্গাসও এখন বাড়তি দামে
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে বেড়ে যাওয়া পরিবহন খরচের কারণে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম যখন হু হু করে বাড়ছে, তখন পিছিয়ে নেই মাছের দামও। সীমিত আয়ের মানুষের নির্ভরতার তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছেরও দাম বেড়েছে।
ঢাকার রামপুরা, সেগুনবাগিচা, বাড্ডা, কারওয়ানবাজার সহ কয়েকটি মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২২০ টাকা কেজি দরে। যা আগে ছিল ১৪০-১৭০ টাকার মধ্যে। ছোট ও মাঝারি সাইজের যেসব পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হতো ১৩০-১৪০ টাকা কেজি দরে তা এখন কিনতে হচ্ছে ১৬০-১৯০ টাকা কেজি।
শুধু পাঙ্গাস-তেলাপিয়াই নয়, বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। কিছুদিন আগেও যেসব টেংরা মাছ বিক্রি হয়েছে ৪৫০-৬৫০ টাকার মধ্যে সেগুলোই এখন ৭০০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের রুই মাছ এখন ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল বাজারভেদে ২৬০-২৮০ টাকার মধ্যে।
হিমায়িত পাবদা মাছ কিছু কিছু বাজারে ৪০০-৪৫০ টাকায় পাওয়া গেলেও তাজা পাবদা কিনতে হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে। ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে যেসব ছোট মাছ পাওয়া যেত সেগুলোও এখন ৪৫০-৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, 'মাছের পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে দামও কিছুটা বেড়েছে। অন্যান্য বছর এই সময় সারাদেশে বর্ষার পানি থাকে, মাছের সরবরাহও থাকে বেশি। এবারে বর্ষার পানি না থাকায় মাছের সরবরাহও কিছুটা কম।'
বাড্ডার একটি ছোট্ট বাজারের নাম 'পাঁচতলা বাজার'। যেখানে সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষগুলো বাজার করে। এই বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ। এখানেও মাছের দাম বেড়েছে, কষ্টে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
আসবাবপত্র তৈরির একটি কারখানার কর্মী রকিবুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'দামের কারণে ক'দিন ধরে ডিম আর ব্রয়লার মুরগি কিনতে পারছি না। মাছের মধ্যে তেলাপিয়া আর পাঙ্গাস নিয়মিত কিনতাম, মাঝেমধ্যে রুই মাছ খাই। কিন্তু যে দাম, তাতে আগে যেখানে এক কেজি তেলাপিয়া কিনতাম এখন সেখানে আধা কেজি নেই। আর মাছের টুকরাও করি ছোট ছোট।'
তিনি বলেন, 'সবকিছুর দাম যে হারে বাড়ছে তাতে করে প্রতিদিনই খাবার তালিকা থেকে কিছু কিছু খাবার বাদ দিতে হচ্ছে।'
চাল, আটা, চিনি, সবজির দামও আরেক দফা বেড়েছে
বেশ কিছুদিন উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল থাকার পর আরও এক দফা বাড়লো চালের দাম। প্রকারভেদে প্রতিকেজি চালের দাম ৩-৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহখানেক আগেও মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি দরে, যা এখন ৫৪-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির তথ্য বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম ৬% বেড়েছে। একই হারে বেড়েছে মাঝারি মানের বিআর-২৮ জাতের চালের দাম। এই চাল ৫৫-৫৮ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে চাল কিনতে আসা এক ক্রেতা মো. আরিফ বলেন, 'দুদিন আগে ৭২ টাকা কেজি দরে মিনিকেট চাল কিনেছি। কিন্তু সেটা খাওয়া যাচ্ছে না।'
মিনিকেট চাল সপ্তাহখানেক আগেও ৬৮-৭২ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। এখন কিনতে হলে সেটা ৭৫-৭৮ টাকা দরকার হচ্ছে। আর নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়, যেটা সবচেয়ে ভালো মানের চাল হিসেবে পরিচিত।
কারওয়ান বাজারের 'আল্লাহর দান রাইস এজেন্সি'র বিক্রেতা হাবিবুর জানান, 'গাড়িভাড়া বেড়েছে, ধানের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবেই চালের দাম বাড়ছে।'
টাঙ্গাইলের ধানের ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, 'গত কয়েকদিনে ধানের দাম ১১৫০ টাকা থেকে বেড়ে মণপ্রতি ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুধু চালই নয়, বাড়ছে আটার দাম। ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া খোলা আটা এখন ৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। টিসিবি বলছে, এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ১৬% বেড়েছে খোলা আটার দাম। প্যাকেট আটার দাম এখনো ১০২-১১০ (২ কেজি) টাকায় বিক্রি হলেও দুয়েকদিনের মধ্যেই এর দাম বাড়বে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
সব পণ্যের দাম বৃদ্ধির মধ্যে অনেকটা গোপনেই বেড়েছে চিনির দাম। প্রতি কেজি চিনি ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও বিক্রেতারা বলছেন সপ্তাহখানেকের মধ্যে কেজিতে আরও ৫ টাকা বাড়তে পারে।
আমদানি শুরু হওয়ায় কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমে আসলেও বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। বিভিন্ন ধরনের সবজিতে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলে বাজার ঘুরে জানা গেছে। এর মধ্যে ছোট পটল ৩০-৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০-৬০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ থেকে বেড়ে ৭০-৮০ টাকা, পেঁয়াজ ৫ টাকা বেড়ে ৫০-৫৫ টাকা, ঝিঙ্গা ৪০-৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।