সরবরাহ কম, মাংসের বিকল্প হিসেবে বাড়ছে চাহিদা, বাজারে মাছের দাম চড়া
মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপ ছড়িয়েছে মাছের বাজারেও। সরবরাহ কম, তারমধ্যে মুরগী, ডিম ও মাংসের দাম বাড়ায় বিকল্প হিসেবে চাহিদা বাড়ায় মাছের দাম এখন চড়া। সবচেয়ে সস্তা বলে পরিচিত পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছের কেজিও এখন ২০০ টাকার বেশি।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ানা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাঝারি আকারের তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা কেজি। আর এক কেজি আকারের পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা কেজি। বড় আকারের পাঙ্গাস ২৫০ টাকা কেজি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এক বছর আগে রুই মাছ কেজি ছিল ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা । এক বছরের ব্যবধানে ৬৬.৬৭ শতাংশ দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। আর এক মাসের ব্যবধানে রুই মাছের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু পাঙ্গাস -তেলাপিয়াই নয় এক মসের ব্যবধানে কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। তারা বলছেন সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। তার উপর মুরগি, ডিম ও গরুর মাংসের দাম বাড়তি থাকায় মাছের চাহিদা বাড়াতেও দাম বেড়েছে।
তবে ইলিশ মাছের সরবরাহ ভালো হওয়ায় দাম কিছুটা কমলেও এখনও এক কেজি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০-১৫০০ টাকা।
প্রায় ১৫ বছর ধরে মাছ বিক্রি করেন আব্দুর রহমান। কারওয়ানবাজারে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, তেলাপিয়া মাছ এক বছর আগেও ১৬০-১৭০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এর পর থেকে মাছের দাম বাড়তে থাকে। এক মাসের তুলনায় কেজিতে ১৫-২০টাকা বেড়ে এখন ২২০-২৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আরেক বিক্রেতা সুভল চন্দ্র দাস বলেন, চাষের পাঙ্গাস মাছ অনেক বছর ধরে ১৪০-১৫০ টাকাই ছিল। এর পর গত এক বছর ধরে এটা বাড়তে থাকে। এখন মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই পাঙ্গাস মাছ কিনছেন । চাহিদা বেড়ে যাওয়া দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, এক মাসের ব্যবধানে ছোট আকারের পাঙ্গাস মাছের দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী আমজাদ বাবু বলেন, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছের দাম কম ছিল। এখনে সেটাও দামি মাছ হয়ে গেছে। পাঙ্গাস মাছ কিনলাম ২৩০ টাকা কেজি। সবজি নিয়েছি বেশি করে, বাসায় স্ত্রীকে বলবো কিভাবে সবজি, ডাল দিয়ে ভাত খেতে হয় সেটা শিখতে। সব কিছুর দাম বাড়ছে কিন্তু বেতনতো আর বাড়ছে না।
মৎস অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে ৪৬ লাখ টন মাছের উৎপাদনে ২৬ লাখ টনের বেশিই আসে চাষের মাছ থেকে। গত এক দশকে এই চাষের মাছ বাংলাদেশের মৎস খাতকে একটি নির্ভরতার জায়গায় নিয়ে গেছে।
তবে গত মাস দুয়েক ধরে বাজারে নদ-নদী ও চাষের মাছের সংকটের কারণে সরবরাহ কমেছে। যে কারণে সব ধরনের মাছই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
এদিকে নতুন করে আরও বাড়েছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। বাজারে খুচরা পর্যায়ে ভালোমানের পেঁয়াজের দাম ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। আর আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।
টিসিবি এর তথ্যমতে, গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম ২৭ শতাংশ বেড়ে ৮০-৮৫ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৩৯ শতাংশ বেড়ে ৬০-৬৫ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া এক মাসের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম ৬৪ শতাংশ বেড়ে ২২০-২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বৃষ্টির কারণে ঢাকার বাজারগুলোতে পণ্য সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় সবজি দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। ঢ্যাঁড়শ ও পটলের কেজি ৫০ টাকা, ঝিঙ্গে ৮০ টাকা, করলা ৭০-৮০ টাকা। কাঁচা মরিচ কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা কমে ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাড়তে থাকা ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। ১৭০ টাকা ডজন ছিল হয় গত সপ্তাহে। সেটা এখন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কারওয়ান বাজারে।