কাস্টমস ডিউটিতে ভর করে জুলাইয়ে রাজস্বে প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ
স্থানীয় পর্যায়ে আয়কর ও ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) আদায়ে তেমন গতি না থাকলেও ইমপোর্ট স্টেজে আদায় করা কাস্টমস ডিউটি ও অন্যান্য ট্যাক্স মিলিয়ে গত জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। যার ফলে সার্বিকভাবে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।
আমদানি পণ্যের বর্ধিত দাম ও মুদ্রাস্ফীতিকে রাজস্বের (বিশেষত ইমপোর্ট ডিউটি ও ভ্যাট) প্রবৃদ্ধি বাড়ার মূল কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ'র (এনবিআর) কাস্টমস বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই মাসে কিছু পণ্য- বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত উচ্চ শুল্কের কমার্শিয়াল পণ্যের আমদানি কিছুটা বেড়েছে। আমদানি পণ্যের বর্ধিত দামও তাতে ভুমিকা রেখেছে।
অন্যদিকে, বাজেটের মাসে কী হয় তা দেখার জন্য অনেকে বেশকিছু আমদানিকৃত পণ্য খালাস না করে অপেক্ষায় ছিলেন। প্রায় ৩৮ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি আদায় বাড়ার মূল কারণ হিসেবে এ বিষয়টিকেও মনে করছেন অনেকে। ওইসব পণ্য জুলাইয়ে ক্লিয়ার হওয়ায় রাজস্ব আলোচ্য মাসে জমা হয়েছে, যা জুলাইয়ের কাস্টমস ডিউটি বাড়ার মূল কারণ।
এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময়ে কাস্টমস ডিউটি আদায়ে নেগেটিভ গ্রোথ ছিলো। যার কারণে চলতি বছরের হিসাবে বেশি গ্রোথ রেট দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম।
বাংলাদেশের বেসরকারি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ইমপোর্ট ডিউটি ও ভ্যাট আদায়ে যে গ্রোথ দেখা গেছে, তা মূলত ইনফ্লেশন ড্রিভেন।"
তিনি বলেন, "বর্ধিত মূল্যের জন্য ভোক্তার পকেট থেকে বাড়তি টাকা যাচ্ছে, যা আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট আদায় বাড়াচ্ছে। চলতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এনবিআরের বাড়তি রাজস্ব আসছে। কিন্তু এনবিআর ইফিসিয়েন্সি বাড়িয়ে রেভিনিউ আদায় বাড়ানোর ক্ষেত্রে রিলাকটেন্ট। তা যদি করতে পারত, ওই রাজস্বের স্বস্তির জায়গায় থেকে জ্বালানি তেলের মত কিছু পণ্যে ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে ট্যাক্স হার কমাতে পারত।"
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অর্থবছরের প্রথম মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
আলোচ্য সময়ে কাস্টমস ডিউটি, ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স মিলিয়ে মোট আদায় করেছে ১৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। অবশ্য চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে আদায় করতে হবে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, আয়কর আদায়ে গ্রোথ না হওয়ার পেছনে কারণ খুঁজছে এনবিআর।
অবশ্য, আয়কর বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুলাইয়ে আয়কর আদায়ে গ্রোথ না হওয়ার পেছনে কারণ তুলে ধরে টিবিএসকে বলেন, "অর্থবেছরের প্রথম মাসে রাজস্ব আদায়ে স্বাভাবিকভাবেই গতি কিছুটা কম থাকে। এছাড়া আগের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য জুনে বেশি ট্যাক্স আদায়ের চাপ থাকে, যা জুলাইয়ের রাজস্ব কমার পেছনে অন্যতম কারণ। কিন্তু কাস্টমস ডিউটি রিয়েল টাইম আদায়ের বাইরে অন্য কোন উপায় নেই।"
সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুল মজিদ মনে করেন, জুলাইয়ে কাস্টমস ডিউটি আদায় বাড়ার একটি কারণ হতে পারে কিছু পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি। কিন্তু প্রকৃত অর্থেই আমদানি বাড়ছে কিনা, কিংবা রাজস্ব কোন পথে যাচ্ছে, তা বুঝতে হলে আরো দুই তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে।
এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ে গ্রোথ ছিলো ৪ শতাংশ। এরমধ্যে কাস্টমস ডিউটিতে নেগেটিভ গ্রোথ ২ শতাংশ, ভ্যাট ১.৩৭ শতাংশ ও ইনকাম ট্যাক্স এ ছিলো ১৫ শতাংশ গ্রোথ।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।