ক্রেতার আগ্রহ বাড়ছে গ্রিন অ্যাপ্লায়েন্সে, কমবে বিদ্যুৎ খরচ
দেড় টনের একটি সাধারণ এসি এক ঘণ্টা চালু রাখলে ১.৬ ইউনিট বিদ্যুৎ কনজিউম করে। তবে দেশে উৎপাদিত নতুন প্রযুক্তির ইনভার্টার এসিতে এ ব্যয় সর্বেোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কম হয় বলে দাবি করছেন ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদকরা।
এসির পাশাপাশি রেফ্রিজারেটর, এলইডি লাইট, ফ্যান, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইন্ডাকশন কুকারসহ প্রায় সব ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্যেই বর্তমানে ৩০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশে স্যামসাংয়ের ডিস্ট্রিবিউটর ও ম্যানুফ্যাকচারার ফেয়ার গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে স্যামসাংয়ের সব প্রডাক্ট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচের পণ্য এসিতে সাশ্রয় হচ্ছে ৭৩ শতাংশ পর্যন্ত।
তিনি বলেন, "স্যামসাং রেফ্রিজারেটরে ৭৫ শতাংশ এবং ওয়াশিং মেশিনে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী টেকনোলজি ব্যবহার হয়। অন্যান্য অ্যাপ্লায়েন্সেও একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদন করছি আমরা।"
বছরে ৩২-৩৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হওয়া ইলেকট্রনিক্স অ্যাপ্লায়েন্স খাতে উন্নত দেশের মতো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে খুব দ্রুতই। পাশাপাশি ভবন নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ ডেকোরেশনসহ নানা বিষয়েও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করছে দেশী-বিদেশী কোম্পানিগুলো। এতে ৩০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পণ্যের পাশাপাশি কারখানায় ইনভারটার মেশিন, স্বয়ংক্রিয় ভোল্টেজ রেগুলেটর (এভিআর) বা ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব। তাছাড়া ইনভারটার জেনারেটরের মাধ্যমে বাসাবাড়ি, অফিস, হাসপাতাল, শপিংমল, কারখানা, দোকান, মসজিদ, ব্যাংক-বীমায় জ্বালানির ব্যবহারও ২০-৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি এবং এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হুমায়ুন রশীদ বলেন, "বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ও পণ্যের ব্যবহার হচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে এর তেমন প্রসার না ঘটলেও বেসরকারি পর্যায়ে বহু কোম্পানি নিজেদের উদ্যোগে এসব প্রযুক্তি ও পণ্যের ব্যবহার শুরু করেছেন। ইলেকট্রনিক্স পণ্যের প্রায় সবই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হচ্ছে। আমরা কারখানা এবং অফিসে গ্রিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুতের ব্যবহার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে এনেছি।"
ওয়ালটন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রনিক্স নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। দেশের হোম অ্যাপ্লায়েন্স বাজারের ৬০% এর বেশি এখন এই ইলেকট্রনিক্স জায়ান্টের হাতে। বর্তমানে প্রায় ৪০টি দেশে হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য রপ্তানি করে ওয়ালটন।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি-এর প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ফিরোজ আলম বলেন, সাধারণ প্রযুক্তির ফ্রিজের তুলনায় ওয়ালটনের ইনভার্টার ফ্রিজ কম্প্রেসার চালাতে প্রায় ৮-১০ গুণ কম বিদ্যুৎ খরচ করে। ওয়ালটনের রেফ্রিজারেটর সাধারণ ফ্রিজের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি এনার্জি সাশ্রয় করে।
"১ টন ওয়ালটন এসি প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ২.১৯ টাকা মূল্যের বিদ্যুৎ কনজিউম করে যার অর্থ হলো এটি শুধু বাংলাদেশেই না, উপমহাদেশেরও সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এয়ারকন্ডিশনার।"
চীন ভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় গ্লোবাল ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ড গ্রি-এর সামগ্রিক এসির বাজারে ৬০% অংশীদারিত্ব রয়েছে। গ্রি এখন ন্যানো-টেকনোলজি কম্প্রেসার সম্বলিত সুপার এনার্জি-সেভিং এসি সরবরাহ করছে।
ইলেক্ট্রো মার্টের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নুরুল আফসার বলেন, বিশ্বের প্রথম বুস্ট ইনভার্টার কম্প্রেসারের গ্রি এসি ৭০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। এর টি-৩ প্রযুক্তি যেকোনো পরিস্থিতিতে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বায়ুপ্রবাহ কমাতে পারে।
"মাত্র এক মিনিটে গ্রি এসি ভিতরের ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাইরের ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমিয়ে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আনতে পারে", যোগ করেন তিনি।
স্যামসাং, ওয়ালটনের মতোই বর্তমানে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদন করছে ভিশন, কনকা, এলজি, ট্রান্সটেক, ভিসতা, গ্রি, সনি র্যাংকস, মিনিস্টারসহ প্রায় সব ব্র্যান্ড।
বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর মধ্যে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভিশন ইলেকট্রনিক্স।
ভিশন ইলেকট্রনিক্সের মূল কোম্পানি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং) চৌধুরী কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ভিশনের সিলিং ফ্যান, এলইডি লাইট, রেফ্রিজারেটর ৩০-৭০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে।