গার্মেন্টস, হোম টেক্সটাইলে ভর করে আগস্টে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৩৬%
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/09/04/export-update.jpg)
তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও পাটজাত পণ্যসহ আরও বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর ভর করে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৬১ বিলিয়ন ডলারে।
সবমিলিয়ে গত দুই মাসের ইয়ার-অন-ইয়ার এক্সপোর্ট গ্রোথ বা রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। মূলত কাঁচামালের বাড়তি দর, মাল পরিবহনের খরচ বৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি চীন থেকে কিছু অর্ডার বাংলাদেশে সরে আসার কারণে রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এমনটিই মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, গত ২০২১-২২ অর্থবছরের আগস্টে কোভিডের কারণে রপ্তানি তুলনামূলক কম ছিল, যার কারণে গেল আগস্টে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হার বেশি দেখা গেছে। কিন্তু আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে রপ্তানির এ প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে না, কারণ বর্তমানে অর্ডার কম আসছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ শহীদুল্লাহ আজিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত বছরের আগস্টে কোভিডের কারণে কিছু বিধিনিষেধ ছিল, যার কারণে রপ্তানির পরিমাণ ছিল কম। এ কারণে ইয়ার-অন-ইয়ার রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার বেশি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যদি মান্থ-অন-মান্থ (মাস হিসেবে) হিসাব করা হয়, তাহলে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে দেখা যাবে, জুলাইয়ের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ কমেছে।"
তিনি আরও বলেন, "ইতোমধ্যে অর্ডার কমতে শুরু করেছে, এর পরিস্কার প্রভাব দেখা যাবে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে।"
দেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের একাধিক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে রপ্তানির যে গতি দেখা গেছে, সেই গতি আগামী মাস থেকেই কমবে। কোভিড থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য দেশগুলোতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ প্রচুর অর্ডার দিতে থাকে। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তা দীর্ঘায়িত হতে থাকলে, আবারও ক্রয় কমিয়ে দেয় ভোক্তারা। ফলে কমছে অর্ডার, যার প্রতিফলন আগামী দুই তিন মাসের মধ্যেই দেখা যাবে।
বাংলাদেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
তবে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের একটি অংশ এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ যেহেতু বেসিক আইটেমের পোশাক বেশি তৈরি করে এবং বিভিন্ন কারণে চীন থেকে কিছু বায়ার বাংলাদেশে আসছেন, ফলে আগামী দিনগুলোতে অর্ডারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব নাও দেখা যেতে পারে।
পোশাক রপ্তানিকারক এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ টিবিএসকে বলেন, বেশকিছু বায়ার, যারা আগে হয়ত এক লাখ পিস পোশাক ক্রয় করতো, তারা এখন দুই লাখ পিসের খোঁজ করছেন।
"এ ধরনের অর্ডার কনফার্ম হলে আগামী মাসগুলোতে অর্ডারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব নাও দেখা যেতে পারে," যোগ করেন তিনি।
তৈরি পোশাকের পরেই বাংলাদেশের উদীয়মান রপ্তানির তালিকায় রয়েছে হোম টেক্সটাইল। এ খাতের উদ্যোক্তারা অর্ডারে তেমন নেতিবাচক প্রভাব দেখছেন না এখনও।
টাওয়েল টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন সোহেল টিবিএসকে বলেন, "আমাদের হাতে প্রচুর রপ্তানি আদেশ রয়েছে। বিশেষত, পাকিস্তান থেকে বেশকিছু অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। নতুন করে সেখানে বন্যা হওয়ায় আরো অর্ডার আসার সম্ভাবনা রয়েছে।"
অবশ্য অর্ডার থাকলেও তাদের মুনাফা খেয়ে ফেলছে বর্তমান জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও লোডশেডিং।
তিনি বলেন, "লোডশেডিংয়ের কারণে আমার কারখানায় প্রতিদিন ৯২ হাজার টাকার ডিজেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান না হলে, শুধু অর্ডারই আসবে কিন্তু লাভ আসবে না।"
অন্যদিকে, বাংলাদেশের রপ্তানির যে গতি বর্তমান রয়েছে, তা সন্তোষজনক বলে মনে করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান।
টিবিএস কে তিনি বলেন, "চীন থেকে অর্ডার বাংলাদেশে আসছে, এটি আশার খবর। তবে আমাদের ভ্যালু এডিশনের হার খুবই কম। এ দিকে মনযোগ দিতে হবে।"
"এছাড়া, পোশাক খাত ছাড়াও অন্যান্য খাতের আমাদের মনযোগ বাড়াতে হবে। তাহলে ওইসব খাত থেকে ভালো প্রবৃদ্ধি আশা করা যায়," যোগ করেন তিনি।
তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান মনে করেন, বাংলাদেশ আগামী দুই থেকে তিন মাস রপ্তানির এই গতি ধরে রাখতে সমর্থ হবে।
২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫২ বিলিয়ন ডলার, আর প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৪ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছর কিছুটা সতর্কতার অংশ হিসেবে প্রবৃদ্ধির হার ১১ শতাংশে নামিয়ে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫৮ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবি'র হিসাব অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি হয়েছে সাড়ে আট বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
পরিসংখ্যান অনুযায়, প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ওভেন পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি (৩৪ শতাংশ) নিট পোশাকের তুলনায় বেশ ভালো হয়েছে, যদিও নিটওয়্যার পোশাক থেকেই আয়ের পরিমাণ বেশি। এছাড়া হোম টেক্সটাইল, স্পেশালাইজড টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখেছে বাংলাদেশ।
একই সময়ে হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ এবং কৃষি পণ্যের রপ্তানি কমেছে।