সিএমএসএমই খাতে ছয় মাসে নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৮০%
কোভিডকালীন কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ বিতরণ কমে গেলেও, কোভিড পরিস্থতি স্বাভাবিক ধারায় ফেরার এ খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। চলতি বছরের জন্য সিএমএসএমই নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরে জুন শেষে ছয় মাসে সিএমএসএমই খাতে নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, মহামারি করোনাকালীন ছোট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঐ সময়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ কমে যায়। এখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোক্তারা আবার তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল করতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। যার ফলে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ বেড়েছে। আগামীতে এ খাতে ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে উৎপাদনশীল ও ব্যবসা খাতে। এ দুই খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়।
এছাড়া জুন শেষে মোট সিএমএসএমই খাতে বিতরণকৃত ঋণের খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫.২৬ শতাংশ।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্টে দেখা যায়, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৫৬ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।
২০২১ সালের (এপ্রিল-জুন) প্রান্তিকে এ খাতের ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ৪১ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।
এছাড়া চলতি বছরের (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকের তুলনায় ৯ শতাংশ বেড়েছে ঋণ বিতরণ।
বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এবং মালিক এবং তুলিকার প্রতিষ্ঠাতা ইসরাত জাহান চৌধুরী বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের জন্য দ্রুত ঋণ বিতরণ সম্ভব হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিএমএসএমই সেক্টরে ঋণ বিতরণের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চাপ দেয়। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এই উদ্যোগ নেয় তারা।"
তিনি আরও বলেন, "এটি একটি ইতিবাচক লক্ষণ যে নারী উদ্যোক্তারা আরও সহজে ঋণ পাচ্ছেন।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, "এখন ব্যাংকগুলোকে বড় ঋণ বিতরণের চেয়ে ছোট ঋণ বিতরণে বেশি তাগাদা দেয়া হচ্ছে। যেহেতু ক্ষুদ্র ঋণে ছোট ব্যবসায়ীরা এবং সাধারণ শ্রমিকরা লাভবান হয়, তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তৎপর রয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ বেড়েছে।"
"দেশের অর্থনীতিতে ছোট ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই ছোট ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ছোট ঋণ আদায়ও ভালো। আগামীতে ছোট ঋণ বিতরণ আরও বাড়বে।"
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিল-জুন সময়ে এসএমই খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে নয় হাজার ৭১০ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। পল্লী এলাকার এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয় ১১ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকার ঋণ। আলোচিত সময়ে জামানতবিহীন ঋণ ৯ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়।
নিয়মিত এসএমই ঋণের পাশাপাশি কোভিড-১৯ এর প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই প্যাকেজ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজের প্রথম পর্যায়ের পর এবার দ্বিতীয় পর্যায়ের বিতরণ কার্যক্রম এর মধ্যে শেষ হয়েছে। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে দ্বিতীয় মেয়াদে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পে প্রণোদনা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২০ হাজার কোটি টাকা।
তবে বিদায়ী অর্থবছরের (জুলাই-জুন) ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। ইতোমধ্যে তৃতীয় পর্যায়ের প্রণোদনা ঋণ বিতরণ শুরু করেছে বাংক।