ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারের চার্জ বৃদ্ধি, আমদানিকারকদের বছরে খরচ বাড়বে ৫৭%
ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং চার্জ ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে দেশের আমদানিকারকদেরকে বার্ষিক ৫৪৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত বোঝা বহন করতে হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
যদিও এই অতিরিক্ত চার্জে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হবেন স্থানীয় ভোক্তারাই, রপ্তানিকারকরা মূলত প্রতিযোগিতা হারানোর আশঙ্কা করছেন। ব্যবসায়ীদের মতে, রপ্তানি চাহিদা হ্রাসের প্রবণতার কারণে বিদেশি ক্রেতাদের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচটা উঠিয়ে আনা তাদের পক্ষে সহজ হবেনা।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ারডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা) জ্বালানি তেলের দামের সাম্প্রতিক বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রতিটি আমদানি বিলের জন্য ফরওয়ার্ডিং চার্জ ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে এটি।
চার্জ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বাফার যুক্তি ছিল, ডেস্টিনেশন সার্ভিস চার্জ ২০১৪ সাল থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে বছরের পর বছর ধরে, ইউটিলিটি এবং জ্বালানির দর বৃদ্ধির কারণে তাদের ব্যবসার খরচ বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দামের সর্বশেষ বৃদ্ধির পর এই চার্জ বাড়ানো ছাড়া তাদের কাছে আর উপায় ছিলো না বলে উল্লেখ করে বাফা।
এদিকে বাড়তি এই চার্জ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, বাফা সভাপতি, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ;র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ২০১০ সালে আমদানি পণ্যে বিএল প্রতি ডেস্টিনেশন সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করে দেয় ২ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে বাফা নিজেরাই বিএল প্রতি ৩ হাজার ৫ টাকা হারে আদায় করছিল।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত হারের চেয়ে অতিরিক্ত চার্জ আদায় করার কারণে ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত ১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা আদায় করেছে বাফা। এবার ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধিতে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ৫৪৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের চার্জ বৃদ্ধির বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, "স্টেক হোল্ডার সাথে আলোচনা ছাড়া চার্জ বৃদ্ধির এই সিন্ধান্ত অনৈতিক। এর ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে পণ্য মূল্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বাড়তি এই ব্যয় ভোক্তাদের বহন করতে হবে। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার চার্জ বাড়ানো উচিত হয়নি।"
তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এমন এক পরিস্থিতিতে ফ্রেইট ফারোর্ডার চার্জ বেড়েছে যখন গার্মেন্টসগুলোতে অর্ডার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম।
তারা আরো জানায়, ইউরোপ আমেরিকায় ইনফ্লুয়েশেন এবং রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি পোশাক খাতে এমনিতেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই মহূর্তে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার চার্জ বৃদ্ধি এ খাতের জন্য বাড়তি চাপ। এর ফলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দুরুহ হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।
বিকেএমইএ'র পরিচালক শামছুল আজম টিবিএসকে বলেন, চার্জ বৃদ্ধির কারণে খরচ আবারো বেড়ে গেছে।
"প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। ক্রেতারা পণ্যচালান বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ফ্রেইট চার্জ সর্বনিম্ন ১০ থেকে ১২ হাজার ডলার। অথচ আমাদের প্রতিযোগী দেশ কম্পোডিয়া এবং ভিয়েতনামে এই খরচ ৫ থেকে ৬ হাজার ডলার," বলেন তিনি।
শামছুল আজম আরো বলেন, "ফ্রেইট চার্জ, আইসিডি চার্জসহ ব্যবসার অন্যান্য খরচ বাড়ার কারণে আমরা এমনিতেই প্রতিযোগিদের গুলোর তুলানায় পিছিয়ে আছি। এর মধ্যে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের বাড়তি এই চার্জের কারণে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।"
বিজিএমইএ'র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের চাহিদা ও বিক্রয় দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশেও ক্রেতাদের বিভিন্ন রপ্তানি আদেশ ক্রমাগত স্থগিত হচ্ছে।
"এমন পরিস্থিতিতে এই চার্জ বৃদ্ধির ফলে আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রতিযোগীতার স্থান হারিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে," বলেন তিনি।
চার্জ বৃদ্ধির বিষয়ে বাফার সহ সভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, "চার্জ বৃদ্ধি করা হয়েছে বাস্তবতার নিরিখে। এখানে কোন পক্ষকে পাশ কাটানোর বিষয় নেই। কোন ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার যাতে নিজেদের ইচ্ছেমতো চার্জ নিতে না পারে সেজন্য চার্জ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।"
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো: ফাইজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের চার্জ বৃদ্ধির বিষয়ে বিজিএমইএ একটি চিঠি দিয়েছে। চার্জ বৃদ্ধির বিষয়টি কাস্টমসের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নয়।
এদিকে জ্বলানি তেলের দাম বাড়ার কারণে এর আগে চার্জ বাড়িয়েছিলো বিকডা। গত ৬ আগষ্ট তেলের দাম বাড়ার পর আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে ৩৫ শতাংশ, খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ২৪ শতাংশ এবং রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে ২৫ শতাংশ চার্জ বৃদ্ধি করেছিলো বিকডা।
পরবর্তীতে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৫ টাকা কমায় রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং চার্জ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২১.৫ শতাংশ, আমদানি পণ্য হ্যন্ডলিং চার্জ ৩৫ শতাংশ কমিয়ে ৩০ শতাংশ এবং খালি কন্টেইনার হ্যন্ডলিং চার্জ ২৪ শতাশ থেকে কমিয়ে ২০.৫ শতাংশ করা হয়।