নগরায়নে বাড়ছে চাহিদা, বড় হচ্ছে পানির কলের বাজার
মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, দ্রুত নগরায়ণ, আবাসন খাতের পরিধি বৃদ্ধি এবং জীবন ধারণের অনুষঙ্গের পরিবর্তনের কারণে দেশে চাহিদা বাড়ছে পানির কলের।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বার্ষিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে পানির ট্যাপের বাজার। তবে আরএফএল ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো ব্র্যান্ড না থাকায় বাজারের বড় অংশই বিদেশি পণ্যের দখলে। ফলে বাজারে বিপুল পরিমাণ মানহীন পণ্য দেখা যায়।
বাংলাদেশে ৫০টির মতো কোম্পানি প্লাস্টিক, ইস্পাত ও মেটালের পানির কল তৈরি করে। এর মধ্যে বিব কক ওয়াটার ট্যাপ, শাওয়ার, ওয়াটার ক্লোসেট কমোড, বেসিন ট্যাপ ও স্কোয়াট টয়লেট ট্যাপ অন্যতম।
তবে আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা দামি হোটেল-রিসোর্টে ব্যবহার করার মতো অত্যাধুনিক ডিজাইনের পণ্য ইতালি, জার্মানি, কোরিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, চীন ও তাইওয়ান থেকে আমদানি হয়। দাম কম হওয়ায় কারণে চীন থেকে নিম্ন মানের পণ্যও আসে। ফলে দেশে বিক্রীত মোট স্যানিটারি ফিটিংসের ৫০ শতাংশের বেশি বিদেশি পণ্যের দখলে।
বাংলাদেশ স্যানিটারিওয়্যার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী মো. শহীদ উল্লাহ বলেন, 'সাধারণ বাসাবাড়ি কিংবা ব্যবসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশি কোম্পানির পানির কল ব্যবহার হয়। কিন্তু সুন্দর ডিজাইন ও টেকসই হওয়ার কারণে উচ্চবিত্তরা এসে বিদেশি পানির কলই খোঁজেন।'
ঢাকার হাতিরপুরের রাসেল স্যানিটারির স্বত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভবন নির্মাণসহ উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে পানির কলের চাহিদা দ্রুত বেড়েছে।
'তবে সে তুলনায় দেশে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন খুব কম। গ্রাহকরা বিদেশি পণ্যই বেশি খোঁজেন,' বলেন তিনি।
কামাল উদ্দিন আরও জানান, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বাহারি ডিজাইনের পানির কল বিক্রি কতে হয়। কোনোটি দেখতে গোল আপেলের মতো, আবার কোনোটি দেখতে জিরাফের গলার মতো লম্বা বাঁকানো, কোনোটি দেখতে কুণ্ডলাকৃতির সাপের মতো।
দেশে বর্তমানে পানির কলের বাজারে বড় ব্র্যান্ড সেভাবে নেই। দেশের প্রথম কোম্পানি হিসাবে ১৯৭৩ সাল থেকে ব্যবসা করছে শরীফ মেটাল। এ কোম্পানিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৩০ ধরনের ফসেট উৎপাদন করে। তাদের বাজার হিস্যা ১০ শতাংশের কিছু কম।
শরীফ মেটালের মার্কেটিং ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ বলেন, 'আমাদের প্রায় সব পণ্যই মেটালের তৈরি এবং বিশ্বমানের। তবে ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলেও বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পারছি না।'
শরীফ ছাড়াও বাজারে সাত্তার, রিম্যাক, হাবিব, নাজমা মেটালের মতো কিছু ব্র্যান্ড পানির কল উৎপাদন করছে। এর মধ্যে প্রাণ-আরএফএল ২০১৩ সাল থেকে থেকে এ শিল্পে ব্যবসা করছে। শুরুতে কোম্পানিটি প্লাস্টিকের পানির কল উৎপাদন করলেও এখন মেটালের কলও উৎপাদন করছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'আমরা মেটাল দিয়ে আরএফএল বাথরুমের ফিটিং এবং প্লাস্টিকের উপাদান দিয়ে শাইন ফসেট তৈরি করছি। ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও নেপালসহ ২০টি দেশে আমাদের শাইন স্যানিটারিওয়্যার রপ্তানি হচ্ছে।'
মান ও দাম
ঢাকার কারওয়ান বাজারের আলম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী সাইদুল আলম জানান, নকশা ও আকৃতির ওপর পানির কলের দাম নির্ভর করে।
তিনি বলেন, 'দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানির পানির কলের দাম মানভেদে ২০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর বিদেশি ট্যাপের ক্ষেত্রে দাম ৫০০ টাকা থেকে মানভেদে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। হাতের স্পর্শ ছাড়া সেন্সরে কাজ করা বিদেশি ট্যাপ পাওয়া যায় ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
'এছাড়া সেট হিসেবে পানির কলে ৭ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।'
কেমন পানির কল কিনতে হবে
হাজী মো. শহীদ উল্লাহ বলেন, 'দেশের বাজারে যেসব পানির কল ও শাওয়ারহেড পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই সাধারণ মানের। নিম্নমানের উপকরণ ও প্রাচীন প্রযুক্তিতে তৈরি পানির কলের ইলেকট্রোপ্লেটিং উঠে যায়, মরিচা ধরে ক্ষয় হয়। এতে পানি প্রবাহ ব্যাহত হয়।'
ইউনাইটেড স্টেটস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির তথ্যানুযায়ী, একটি ত্রুটিপূর্ণ পানির কল থেকে প্রতি সেকেন্ডে এক ফোঁটা হারে পানি পড়তে থাকলে তা থেকে বছরে প্রায় ৩ হাজার গ্যালন পানি অপচয় হয়, যা দিয়ে প্রায় ১৮০ বার গোসল করা সম্ভব। তাই ভালো পানির কল কেনা উচিত। এতে বাথরুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং ব্যবহারের সুবিধার পাশাপাশি পানির অপচয় রোধও হবে।