সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি
দেশের অর্থনীতির ধীরগতির প্রভাব পড়েছে সরকারের রাজস্ব আদায়েও। সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্বের যোগানদাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ'র (এনবিআর) এর হিসাব অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি আগের দুই মাসের তুলনায় কমেছে।
এনবিআর'র তথ্য মতে, গত মাসে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও কাস্টমস শুল্ক মিলিয়ে এনবিআর'র রাজস্ব আদায় বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৬৭ শতাংশ। অথচ আগের দুই মাসে গড়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছিল প্রায় ১৯ শতাংশ হারে।
অবশ্য জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের কিছুটা বেশি।
রাজস্ব খাত সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদরাও সেপ্টেম্বরে আদায় কমার পেছনে আমদানি কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। এনবিআরের পরিসংখ্যানও তাই বলছে।
আলোচ্য সময়ে ভ্যাট ও আয়কর আদায় বাড়লেও আমদানি শুল্ক আদায় কমে গেছে।
এছাড়া, অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাবের কারণে তা সামষ্টিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যার চিত্র এনবিআর'র রাজস্ব আদায়ে দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবদরা।
বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতির (ম্যাক্রো ইকোনমি) মূল সূচকগুলোর বেশিরভাগই নিম্নমুখী। গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে, চলতি অক্টোবরে আরো বেশি হারে কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে আমদানির পাশাপাশি কমেছে রেমিট্যান্সও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ জুলাই ও আগস্টের তুলনায় কম। আলোচ্য দুই মাসে ২ বিলিয়ন করে রেমিট্যান্স আসলেও অক্টোবরের ২০ দিনে এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারের মত।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৬ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের এর পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা।
এছাড়া, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৭ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি, যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৮ হাজার কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বরের রাজস্বের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি আদায় না বেড়ে বরং কমেছে প্রায় দেড় শতাংশ। তবে আলোচ্য মাসে ভ্যাট আদায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ ও আয়কর আদায় বেড়েছে ৭ শতাংশ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যন্ডার্ডকে বলেন, আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব কমেছে। চলতি অক্টোবরেও আমদানি কমতির দিকে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, সেপ্টেম্বরে ওই কাস্টমস হাউজে রেভিনিউ গ্রোথ বা রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশের ওপরে ছিল।
"কিন্তু মোট আমদানি শুল্কে যেহেতু চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অবদান অনেক বেশি, তাই চট্টগ্রামে কমলে এবং অন্য কাস্টমস হাউজগুলোতে বাড়লেও গ্রোথ আসা কঠিন হয়ে যায়," যোগ করেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, "অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে যে বাড়তি আমদানি কর আদায় হয়েছিল, তার মূল কারণ ছিল মূল্যবৃদ্ধিজনিত আমদানি বৃদ্ধি; এটি আসলে এনবিআরের দক্ষতায় নয়। সেপ্টেম্বরে এসে তা কমতে থাকায় রাজস্বও কমেছে।"
তিনি মনে করেন, কর ফাঁকি নিয়ন্ত্রণ এবং অনলাইনে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো যেতে পারে।