এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্স ছাড়ালো ১ লাখ কোটির মাইলফলক
২০১৩ সালে চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা এক লাখ কোটি টাকার মাইলফলক পার করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ১ লাখ ৬ হাজার ৬২৮ কোটি টাকার রেমিট্যান্স বিতরণ করা হয়েছে।
জুন প্রান্তিকের তুলনায় সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে ৯.৮৭ শতাংশ।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আসা রেমিট্যান্সের প্রায় ৯৬ শতাংশই এনেছে ৫ ব্যাংক।
এর মধ্যে মোট রেমিট্যান্সের ৫২ শতাংশ এনেছে ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংক ২৪.৪৮ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়া ১০.৪৩ শতাংশ, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক ৫.৩৫ শতাংশ এবং অগ্রণী ব্যাংক এনেছে ৩.৫০ শতাংশ। এসব রেমিট্যান্সের প্রায় ৯১ শতাংশই বিতরণ করা হয়েছে গ্রামীণ এলাকায়।
দেশের সামগ্রিক ব্যাংকিং চ্যানেলে যেখানে ডিপোজিটের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হচ্ছে না, সেখানে গ্রামীণ রেমিট্যান্সে ভর করে এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলে ডিপোজিট প্রথমবারের মতো ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলে ডিপোজিট ছিল ২২ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এই ডিপোজিট দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।
সে হিসাবে, গত ১ বছরে এই চ্যানেলে ডিপোজিট বেড়েছে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি বা ৩৩%।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা খোলায় আগ্রহী হচ্ছে। ফলে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি খাতটিকে আরো এগিয়ে নিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, ৩১টি ব্যাংক বর্তমানে ২০ হাজার ১৭৭টি এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এসব আউটলেটের মধ্যে ১৭ হাজার ৩৮৪টিই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে গ্রামাঞ্চলে। নগরে আছে ২৭৯৩টি আউটলেট।
ব্যাংক এশিয়ার ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও এজেন্ট ব্যাংকিং এর মোহাম্মদ জিয়াউল হাসান মোল্লা টিবিএসকে বলেন, "এজেন্ট ব্যাংকিং এ নতুন নতুন ব্যাংক যুক্ত হওয়ার কারণে এর ব্যাপ্তি দিনদিন বাড়ছে। ডিপোজিট বাড়ার পেছনে রেমিট্যান্স অনেক বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।"
তিনি জানান, শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১২.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স বিতরণ করা হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। এসব রেমিট্যান্স গ্রহীতাদের সিংহভাগই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী।
"এই চ্যানেলটিকে উৎসাহিত করা হলে রেমিট্যান্স আরো বাড়বে বলে আমি ধারণা করছি," যোগ করেন তিনি।
এদিকে, সেপ্টেম্বর শেষে ঋণ বিতরণ চালু হওয়ার পর ৬৮৫ কোটি টাকা হলেও খাতসংশ্লিষ্টরা বিতরণ আরো বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলে ডিপোজিট সংগ্রহ যেভাবে বেড়েছে, ঋণ বিতরণ সেভাবে বাড়েনি। গত ১ বছরে ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো।
এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেন টিবিএসকে বলেন, "এখনো দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে রয়ে গেছে। এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে তাদের ধীরে ধীরে ব্যাংক চ্যানেলে নিয়ে আসা হচ্ছে।"
তবে এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে যে পরিমাণ ডিপোজিট সংগ্রহ করা হচ্ছে, সে তুলনায় লোন ডিসবার্স করা হচ্ছে অনেক কম, উল্লেখ করেন তিনি।
গ্রাম থেকে ডিপোজিট সংগ্রহ করে শহরে ঋণ দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "গ্রামীণ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে সেখানে ঋণ দেওয়া বাড়াতে হবে। ব্র্যাক ব্যাংক গ্রামে ঋণ বাড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্য ব্যাংকগুলোকেও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।"
বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সিএমএসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি এ সুযোগ কাজে লাগানোর প্রতি জোর দেন।