উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও কমেছে তৈরি পোশাকের স্থানীয় মূল্য সংযোজন
৫১.৩৯ শতাংশে নেমেছে তৈরি পোশাক পণ্য (আরএমজি) রপ্তানিতে স্থানীয় মূল্য সংযোজন। প্রধানত বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) যা পৌঁছেছে ১০,২৭৪.৩৪ মিলিয়ন ডলারে।
এসময়ে কাঁচামাল আমদানি ব্যয় ছিল ৪,৯৮৪.১৩ মিলিয়ন ডলার, যা আরএমজি খাতের মোট রপ্তানি আয়ের ৪৮.৫১ শতাংশ।
আর নিট রপ্তানি হয়েছে ৫,২৯০.২১ মিলিয়ন ডলারের, আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকে যার পরিমাণ ছিল ৪,৮৩৯.৫ মিলিয়ন ডলার।
গার্মেন্টস খাতের কাঁচামাল আমদানির মূল্য হিসাব করতে, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির বদলে কাঁচা তুলা, সিন্থেটিক/ভিসকস ফাইবার, সিন্থেটিক/মিশ্র সুতা, তুলার সুতা, টেক্সটাইল ফ্যাব্রিকস-সহ পোশাকের আনুষাঙ্গিক উপাদানের দাম বিবেচনা করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এই খাতের স্থানীয় মূল্য সংযোজন ছিল ৬৪.৯৮%, যা ২০১২-১৩ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয় ৫৩.৪২% বা ৯,০৫৯.৪৪ মিলিয়ন ডলার। এসময় কাঁচামাল আমদানি ব্যয় ছিল ৪,২১৯.৯৪ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় মূল্য সংযোজন কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করছেন রপ্তানিকারকরা। তবে দুই অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তথ্যের সাথে তুলনা করা পুরোপুরি যৌক্তিক নয় বলে জানান তারা। কারণ রপ্তানি চালান পাঠানোর কমপক্ষে ৪৫ থেকে ১২০ দিন আগেই সাধারণত এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করা হয়।
এছাড়া, রিপিট অর্ডারের ক্ষেত্রে তারা রপ্তানির আরও আগেই কাঁচামাল আমদানি করেন বলেও উল্লেখ করেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আলাপকালে নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি আখতার হোসেন অপূর্ব বলেন, কাঁচামালের দাম বাড়াতেই মূল্য সংযোজনে উল্লেখযোগ্য পতন হয়েছে, বিশেষ করে সুতার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়। কিন্তু, তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্যের দাম বাড়ায়নি বায়াররা।
বিকেএমইএ'র এই ব্যবসায়ী নেতা ব্যবসার পরিস্থিতি এবং আগামী প্রান্তিকের মূল্য সংযোজন নিয়েও তার উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে জানান, প্রায় প্রতিটি কারখানাকে কম সক্ষমতায় উৎপাদন করতে হচ্ছে, এতে পণ্যের 'ওভারহেড কস্ট' বেড়ে গেছে।
অপূর্ব বলেন, 'এখন তুলার দাম কমে আসায়– আমরা যদি পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারি– তাহলে তা মূল্য সংযোজন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে'।
তিনি আরও বলেন, এক ডজন টি শার্ট থেকে মাত্র ১ ডলার মুনাফা হলেও- এখন ডিজেল খরচ হিসেবে তাদের বাড়তি এক ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে, এতে মুনাফা আরও কমছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র টেকসইতা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান শেখ এইচ এম মুস্তাফিজ বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চরম প্রতিকূলতার মধ্যে আছে পোশাক শিল্প।
'আমরা যদি, গত বছরের সমান মূল্যের রপ্তানি করি– তাহলে এখাতের সার্বিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেগেটিভ হবে। কারণ গত বছরের সমান মূল্য সংযোজন করতে হলে আমাদের আরও বেশি বেশি পণ্য রপ্তানি করতে হবে'।
দেশের অন্যতম শীর্ষ আরএমজি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান- রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, যেহেতু রপ্তানিকারকের কাটিং এন্ড মেকিং কস্ট (সিএম) আগের মতোই আছে, সেজন্য পণ্যের রপ্তানি মূল্য (ফ্রেইট অন বোর্ড বা এফওবি) বাড়লে ভ্যালু অ্যাডিশনের রেট (মূল্য সংযোজন হার) কমবে। আর কমলে ভ্যালু অ্যাডিশনের রেট বাড়বে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধরা যাক কোনো পণ্যের এফওবি ১০০ টাকা আর সেখানে সিএম ২৫ টাকা, অর্থাৎ এখানে সিএম ২৫ শতাংশ। আর এই এফওবি যদি ৮০ টাকা হয়– তাহলে মূল্য সংযোজন হবে ৩১ শতাংশের কিছু বেশি। কেননা সিএম যেহেতু প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে, সেজন্য ভ্যালু অ্যাডিশনের হার বেড়ে গেছে।
মূল্য সংযোজন কমার পেছনে কাঁচামাল আমদানির উচ্চ খরচকেই প্রধান কারণ বলে তিনিও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যদি স্থানীয়ভাবে বেশি কাঁচামালের যোগান দিতে পারে, তাহলে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের হার বাড়বে। এই হারটি নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হওয়ার জন্য বিশ্ববাজারে দামের অস্থিতিশীলতাকেই দায়ী করেন মাহমুদ হাসান খান।
তবে তিনি বলেছেন, বর্তমানে কাঁচামালের দাম কিছুটা কম হওয়ায় এসব কাঁচামালে তৈরি করা পোশাক আগামী জানুয়ারি-মার্চে রপ্তানি হবে। সেজন্য ওই সময়ে মূল্য সংযোজনের হার বেশি হতে পারে।
একই মতপোষণ করে বিজিএমইএ-র সহ-সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, সিএম একই থাকলেও– ছয় মাস আগের তুলনায় সুতা বা ফ্যাব্রিকের দাম কম রয়েছে। ফলে জানুয়ারিতে এসব কাঁচামালে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা গেলে ওই সময়ে মূল্য সংযোজনের হারও বাড়বে।