আমদানি কমার প্রভাব অক্টোবরের রাজস্বে
ডলারের উপর চাপ কমাতে সরকার নিরুৎসাহিত করায় আমদানি কমেছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ে। সরকারের রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত অক্টোবরে আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি, ভ্যাট ও ট্যাক্স মিলিয়ে আদায় বেড়েছে ছয় শতাংশেরও কম, যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ছিলো ২২ শতাংশ।
আমদানি পর্যায়ে ট্যাক্স আদায় কমে যাওয়ায় তা অক্টোবরের সার্বিক রাজস্ব আদায়ে প্রভাব ফেলেছে। সূত্র জানায়, আলোচ্য সময়ে সবমিলিয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১০ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পাঁচ শতাংশ কম। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ইমপোর্ট ডিউটি, লোকাল স্টেজ এ ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স মিলিয়ে সার্বিকভাবে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম।
এনবিআরের শুল্ক বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমদানি কমে যাওয়ায় তা আমদানি শুল্ক আদায় কমিয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ফলসহ বেশকিছু পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার জন্য এনবিআর রেগুলেটরি ডিউটি বাড়িয়েছে, আবার ব্যাংক আমদানির জন্য লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলা কমিয়ে দিয়েছে। এসব কারণে আমদানি কমেছে। আর আমদানি কমলে আমদানি পর্যায়ে ট্যাক্স কমবে, এটাই স্বাভাবিক।"
আগামী মাসগুলোতে রাজস্ব বাড়তে পারে কিনা, এমন কোন আশার কথাও বলতে পারেন নি তিনি। তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে আমদানি বাড়তে পারে। আমরাও সেই আশায় থাকলাম।।"
ব্যবসায়ীরাও একই কথা বলছেন।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, "ডলারের প্রাইস অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে চাচ্ছে না। আবার বিশেষ প্রয়োজন না হলে ব্যবসায়ীরাও আমদানি করছেন না। এসব কারণে আমদানি কমেছে, যার কারণে আমদানিতে রাজস্ব আদায়ও কমেছে।"
তবে তিনি মনে করেন, স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট আদায় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত অক্টোবরে আমদানির জন্য এলসি ওপেনিং কমেছে ৭.২৪ শতাংশ। এর আগের দুই মাস সেপ্টেম্বর ও আগস্টেও এলসি ওপেনিং কমেছে যথাক্রমে ২১ শতাংশ ও ১১ শতাংশ।
এছাড়া ম্যাক্রো ইকোনমির মূল সূচকগুলোর বেশিরভাগই এখন নিম্নমুখী। গত সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরেও রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। আর রেমিট্যান্স কমেছে ৭ শতাংশের বেশি।
অক্টোবরের আগের মাস সেপ্টেম্বরেও রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৬৭%। এর আগে জুলাই ও আগস্টে গড়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছিলো প্রায় ১৯% হারে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কমেছে ২,৩৪৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ২৩,৭৭৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, আর গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিলো ২১,৫৯৯ কোটি টাকা।