কলম্বো বন্দর থেকে ‘স্মুথ-কানেকটিভিটি’ চায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা
বন্ধুপ্রতীম দেশ শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরকে আমদানি-রপ্তানি দুই ক্ষেত্রেই প্রথম পছন্দ হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলো বাংলাদেশেরব্যবসায়ীরা। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সরবরাহ চেইন নির্বিঘ্ন রাখতে শিপিং লাইনগুলো কলম্বোর পরিবর্তে সিঙ্গাপুর, ভারত সহ অন্যান্য বন্দরে পণ্য খালাস করছে। তবে কলম্বো বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি 'স্মুথ-কানেকটিভিটি' নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও পোশাক আমদানিকারকরা কলম্বো বন্দর ব্যবহারে আবারও উৎসাহী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ শিপিং লাইন এজেন্টস এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন কার্যালয়ে শ্রীলঙ্কা বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তারা এসব কথা বলেন।
সভায় কলম্বো বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কিথ ডি বার্নার্ড বলেন, 'পরিস্থিতির কারণে কলম্বো বন্দর সম্পর্কে অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে আমরা হয়তো খুব কঠিন সময় পার করছি, তবে আমরা থেমে নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাতদিন কাজ করছি। পরিস্থিতির কারণে কলম্বো বন্দর বন্ধ রয়েছে বিষয়টি এমন নয়। আমরা চাই বাংলাদেশ শিপিং লাইন এজেন্টস এসোসিয়েশন ও ব্যবসায়ীরা আরও বেশি কলম্বো বন্দর ব্যবহার করবে। ইতোমধ্যেই বন্দরের জয়া কনটেইনার টার্মিনালে বাংলাদেশি ফিডার ভেসেলকে অগ্রাধিকারমূলক নোঙ্গরের সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'শিপিং লাইন বা ব্যবসায়ীরা কী চায়, তার চাইতে বেশি গুরুত্ব পায় আমাদের বায়াররা কী চায়। তারা চায় স্মুথ-কানেকটিভিটি ও সময়সাশ্রয়। সে কারণে কলম্বো বন্দর কর্তৃপক্ষের উচিত বাংলাদেশের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে সময় আরও কিভাবে কমানো যায় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া।'
বাংলাদেশ শিপিং লাইন এজেন্টস এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ সভাপতি সৈয়দ ইকবার আলি শিমুল বলেন, 'আমরা শ্রীলঙ্কা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে দুই ধরনের সহযোগীতা চাই। বিশেষ করে আরএমজি খাতের কার্গো পরিবহন ও এয়ার শিপমেন্টকে আরও কম সময়ে সম্পাদন করা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের চাইতে শ্রীলঙ্কা বেশি চার্জ করছে; সেটিকে কমানো।'
শ্রীলঙ্কা বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপুল জয়াতিসা বলেন, 'শ্রীলঙ্কা বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠছে। একই সঙ্গে কলম্বো বন্দরের পরিধি বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে।'
চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, 'বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রধান হলো পোশাক খাত। আমেরিকা ও ইউরোপে পোশাক রপ্তানির জন্য কলম্বো বন্দর আমাদের জন্য বেশি সুবিধাজনক। তবে আমাদের সেই সুবিধা দেওয়া জন্য কলম্বোকেও প্রস্তুত থাকতে হবে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়ি ও বে-টার্মিনাল বাস্তবায়ন করছি। যেখানে সর্বোচ্চ ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে, যা ভবিষ্যতে এশিয়ার ইকোনোমিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে।। শ্রীলঙ্কা যদি আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা খেয়াল করে, তাহলে তারা ঠিক করতে পারবে বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা কী হওয়া উচিত।'
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের পরিচালক শাহেদ সারওয়ার বলেন, 'শ্রীলঙ্কা যে সময় অতিক্রম করছে, বাংলাদেশও বর্তমানে কাছাকাছি সময় অতিক্রম করছে। এক্ষেত্রে কলম্বো বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ প্রশংসা পাওয়ার মতো। তাদের উচিত অতীতকে পেছনে ফেলে পজেটিভ মার্কেটিং করা। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কেও শ্রীলঙ্কায় পজেটিভ ভাবমূর্তি গড়তে অবদান রাখা।'
কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল কন্টেইনার টার্মিনালের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ক্যাট্রিওনা জয়াসুন্দরা বলেন, 'সিঙ্গাপুরের বদলে কলম্বো বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইউরোপে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচদিন সময় বাঁচাতে পারে। বাংলাদেশের উচিত সেই সুযোগ নেওয়া।'