জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব বেড়েছে ১০.৬১%
দেশের প্রধান শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১০.৬১ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায় ছাড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ হাজার ৮৯৫.৭৬ কোটি টাকা বেশি।
বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দা পরিস্থিতিতেও রাজস্ব আয়ে কাস্টমসের এমন প্রবৃদ্ধি অর্জনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা। চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তারা।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের মূল্যও বেড়ে গেছে। এতে আগের তুলনায় বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ফলে কাস্টমসের আয় বাড়লেও পণ্যের মূল্য এবং শুল্ক দুটোতেই ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এডিশনাল কমিশনার মোঃ জাকির হোসেন জানান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের শুল্ক আদায় কার্যক্রম এখন অনেক বেশি গোছানো। সে কারণে রাজস্ব আয় বেড়েছে।
"অর্থবছর শেষে কী পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে, তা নির্ভর করছে আমদানি পরিস্থিতির ওপর। তবে অবশ্যই গত অর্থবছরের রাজস্ব আয়কে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা যায়," বলেন তিনি।
তিনি আরো জানান, "আমদানি পণ্যের শুল্কায়নে ভ্যালুয়েশন ঠিকভাবে হচ্ছে, এইচএস কোড (হারমোনাইজড সিস্টেম কোড) সহ কাস্টমসের সকল আনুষ্ঠানিকতা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে। এতে শুল্ক ফাঁকির দেওয়ার ঘটনাও কমেছে। যার ফলে সার্বিক রাজস্ব আয় এবং প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।"
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, ৬ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩০ হাজার ১৮০.১৫ কোটি টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২৭ হাজার ২৮৪.৩৯ কেটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। আর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তবে প্রথম ছয় মাসে লক্ষমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ৩৭৯.৮৫ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম কাস্টমসে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৫৯ হাজার ১৫৯.৮৩ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪.৭০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরে সবচেয়ে কম রাজস্ব আদায় হয়েছে ডিসেম্বরে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম টিবিএসকে জানান, আগে ডলারের দাম ৮৪ টাকা হলেও এখন সেটি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে আমদানি পণ্যের দাম এবং শুল্ক দুটোতেই ব্যবসায়ীদের বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, "দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কাস্টমসের রাজস্ব আয়েও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতাকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখছি।"
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের শুল্ক আদায় করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে আসা পণ্যের শুল্কও আদায় করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।