জুলাই-অক্টোবরে চট্টগ্রাম কাস্টমের রাজস্ব ঘাটতি ২,৪১৭ কোটি টাকা
অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব কম আদায় হয়েছে ৯.০৭ শতাংশ বা ২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে রাজস্ব দেশের বৃহৎ এই কাস্টমস স্টেশনের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ২২৩ কোটি টাকা।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, গত প্রায় দুই বছর ধরে ডলার সংকট ও এলসি-সংক্রান্ত জটিলতায় আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এরমধ্যে চলতি অর্থবছর শুরুর সাথে সাথে জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। দফায় দফায় বন্ধ হয়ে যায় বন্দর কাস্টমসের কার্যক্রম। আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এখনো এক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। এতে বৈশ্বিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কমে যায় সার্বিক আমদানি।
তারা বলেন, এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদানিতে। ফলে অর্থবছরের চার মাসে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
জানিয়েছে, তিভে অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব ঘাটতি হলেও গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
তথ্য বলছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম চার মাসে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয় হয়েছিল ২২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা বা ৭ শতাংশ রাজস্ব বেশি আদায় হয়েছে।
চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৩ কোটি ২৮ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। ২০২৩ সালের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৩ কোটি ৬১ লাখ টন। অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম চার মাসে তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি কমেছে ৩৩ লাখ টন।
তবে আমদানি কমলেও বেড়েছে আমদানি চালানের সংখ্যা। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে আমদানি হযেছে ২ লাখ ২৬ হাজার চালান। ২০২৩ সালের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার চালা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের চার মাসে ৩১ হাজার পণ্য চালান বেশি আমদানি হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের মুখপাত্র ও উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাধাগুলো কাটিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমদানির পরিমাণ ও রাজস্ব ফের বাড়বে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, অর্থবছর এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। তবে তবে যতটুকু রাজস্ব আয় হয়েছে, তা গত অর্থবছরকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৩ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৬৮ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৬২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ৯.৪২ শতাংশ।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, রাজস্ব আদায়ে আরেকটি সমস্যা হলো মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি ও জালিয়াতি। এসব কারণে রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
২০২০ সালের জুনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মিথ্যা ঘোষণার জন্য ন্যূনতম জরিমানা নির্ধারণ করে যা ফাঁকি দেওয়া রাজস্বের দ্বিগুণ। এরপর থেকে জালিয়াতির পরিমাণ কমে আসছে বলে জানান কাস্টমস কর্মকর্তারা।