আমদানি স্বাভাবিক করা না গেলে মশলার বাজার স্থিতিশীল হবে না: ভোক্তা অধিদপ্তর
বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডলারের বাড়তি দামের কারণে আদা, রসুনের দাম সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির কথা থাকালেও পণ্যগুলো অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। আমদানি স্বাভাবিক করতে না পারলে মশলাজাতীয় পণ্যগুলোর বাজার স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহ দিয়ে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।
সোমবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলা হয়।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, "আদা-রসুন, হলুদ, শুকনা মরিচের আমদানি ঠিক রাখতে না পারলে স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে না।"
তিনি বলেন, "গত বছর দেশি আদার দাম ছিল ৮০-১২০ টাকা, যেটা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকায়। আমদানি করা আদা ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন যেটা ৪০-৭০ টাকা ছিল, এখন সেটা ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডলারের কারণে এসব পণ্যের দাম ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির কথা, তবে তার চেয়েও অনেক বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।"
কৃষিপণ্যের আমদানিকারক ও শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সহ-সভাপতি হাজী মাজেদ বলেন, "আমদানি না হওয়ার কারণে ১৫ দিন ধরেই বাজার বাড়তি। এক মাস আগে ভারত ও চীনে এলসি হয়নি। এলসি করার পর অন্তত দেড় মাস সময় লাগে চীন থেকে পণ্য আসতে। এক্ষেত্রে আবার শতভাগ এলসি মার্জিন দিতে হচ্ছে। এখানে যদি ২০-৩০ শতাংশও ছাড় দেওয়া হয়, তাহলেও আমদানিকারকরা একটু স্বস্তি পাবে, আমদানিটা বাড়বে।"
বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মাহমুদুল হাসান বলেন, "আদা ও রসুনের শুল্ক কম। দামের ক্ষেত্রে সেটা খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না। তবে স্থানীয় উৎপাদকদের সুরক্ষা দিতে শুকনা মরিচে শুল্ক বেশি আরোপ করা আছে। আর্ন্তজাতিক বাজারে আদা–রসুনের দাম আপাতত বাড়ার কোন সম্ভাবনা না থাকলেও, ডলারের বাড়তি দামের কারণে এবছর এসব পণ্যের দাম কোন ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশের মতোও বেশি হতে পারে।"
এছাড়া মশলাজাত পণ্যের মধ্যে আদা–রসুনের ২০ শতাংশ আমদানি পণ্য, বাকি ৮০ শতাংশ স্থানীয় উৎপাদন।
সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, "এসব পণ্যের বাজার থেকে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশা থামাতে হবে। তাহলে বাজারে কিছুটা স্বস্তি আসবে। রমজানের নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমাতে সমন্বিত তদারকি জোরদার করা উচিত।"
সভার আলোচ্য বিষয়গুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ আকারে তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, "আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা আছে। এদিকে দেশে ডলারের সংকট। এখন অনেক পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিনের কথা বলা হচ্ছে। এটা কোনভাবে ঠিক হচ্ছে না। নিত্যপণ্যের জন্য মার্জিন কমিয়ে রেখে বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।"
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনই ঋণপত্র খোলা স্বাভাবিক করা গেলে রমজানে পণ্যের সংকট হবে না। তবে ইতোমধ্যে বাজারে ৩০০-৪০০ টাকা কেজিপ্রতি জিরার দাম বেড়ে ৬০০ টাকা হয়েছে। আর ৭০০-৭৫০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না এক কেজি তুর্কি জিরা। এই পরিস্থিতির জন্য ডলারের বাড়তি মূল্য আর শতভাগ মার্জিন দিয়ে ঋণপত্র খুলতে দেরি হওয়াকেই দায়ী করেছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।